মশক নিধন কার্যক্রম বাড়াতে হবে

3

চট্টগ্রাম নগরীসহ জেলাজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সূত্র জানায়, গত ছয় মাসে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে নগরে ১১৫ জন ও উপজেলাগুলোতে ১২৭ জন রয়েছে। একটি অনলাইন নিউজ কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরীর চেয়ে উপজেলাগুলোতে (গ্রামাঞ্চল) ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রবি ও সোমবার ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে এক শিশুসহ ছয়জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮১ জন। এর আগে গত জুন মাসে ভর্তি হয়েছিল ৪১ জন এবং তার আগের মাসে চিকিৎসা নেয় ১৭ জন। জানা যায়, নগরীর চেয়ে এবার উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী প্রায় তিনগুণ বেশি। এর মধ্যে লোহাগাড়া উপজেলার এমচরহাট বাজার ঘিরে সবচেয়ে বেশি রোগীর কথা জানা যাচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন একটি অনলাইন মিডিয়াকে বলেছেন, “ওই এলাকা ঘিরে প্রকোপ বেশি, এটা সত্য। কারণ অনুসন্ধানে আমাদের কীটতত্ত্ববিদ সেখানে যাবেন।” সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে চট্টগ্রাম জেলায় ৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ জনই বিভিন্ন উপজেলার এবং ১৭ জন নগরীর বাসিন্দা। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গত বছর ২০২৩ এর চেয়ে এবার জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম। তবে বর্ষার শুরু থেকে ডেঙ্গুর প্রবণতা বাড়তে দেখা যায়। পুরো জুনের তুলনায় জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তবে এতে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার কোন কারণ নেই। কারণ এবার মৌসুমের বড় একটি অংশজুড়ে বৃষ্টির খুব একটা দেখা মিলেনি। এখন শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ শেষ হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। সেইসাথে ডেঙ্গুর আক্রমণও বাড়বে। আমরা জানি, মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নানা জাতের মশার প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে, এসময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে সবসময়। সঙ্গত কারণে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সিভিল সার্জেনও এ কথাটি গণমাধ্যমকে বলেছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ৮১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। অথচ পুরো জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪১ জন। অপরদিকে, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত¡াবধায়ক সুজন বড়–য়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে গত ছয় মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ১৩৩ জন পুরুষ, ৫৯ জন নারী ও ৫০টি শিশু। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজন পুরুষ ও একজন নারীর। মোট আক্রান্তের মধ্যে ১৫ উপজেলায় ১২৭ জন ও নগরে ১১৫ জন রয়েছে। জানা গেছে, বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তিন মাসে ডেঙ্গু রোগী কমে আসছিল। ফেব্রুয়ারিতে ২৫, মার্চে ২৮ ও এপ্রিলে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর মে মাস থেকে রোগী আবার বাড়তে শুরু করেছে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই আবারও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এসময় স্থানীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত সংস্থাসমূহ উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে অন্যন্যবারের মত এবারও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিও সাথে সাথে মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়বে নিঃসন্দেহে। আগেও বলা হয়েছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। কারণ এ সময় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে যায়। এই মশা সচরাচর পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। বর্ষায় যেখানে-সেখানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে এবং খুব সামান্য পানিতেই এই মশা বংশবিস্তার করতে পারে। নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায় মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেক বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখা হয় এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমিয়ে রাখা হয়। নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশবিস্তার দ্রুততর হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানিবাহিত এবং পানিতে জন্ম নেওয়া কীটপতঙ্গবাহী রোগব্যাধি দ্রুত বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগব্যাধিও বাড়বে। এসব নিয়ন্ত্রণে সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগগুলো আরো জোরদার হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমেই এডিস মশা নিধনে অভিযান জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সমাজকেও সচেতন হতে হবে।