মন্ত্রীদের ৫ সমস্যার কথা জানালেন ব্যবসায়ীরা

11

পূর্বদেশ ডেস্ক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও কারফিউয়ের জেরে পাঁচটি সমস্যার উদ্ভব হওয়ার কথা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের প্রধান শিল্প খাতগুলোর ব্যবসায়ীরা গতকাল রোববার ঢাকার বিনিয়োগ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দপ্তরে এক বৈঠকে নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন ওই বৈঠকে।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ বোর্ড সদস্যরা, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ অন্তত ৫০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রায় দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন,আজকে (রোববার) ব্যবসায়ীরা বেশ খোলামেলা আলাপ করেছেন। তাদের পক্ষ থেকে অন্তত পাঁচটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে। আমরা এইসব সমস্যার সমাধানে পৃথকভাবে আবার বসব।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা আজকে (রোববার) দিনের শেষে প্রতিটা খাতের ক্ষতির চিত্র লিখিতভাবে জানাবেন। পরে সেটা নিয়ে আগামীকাল (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ব্যবসায়ীরা যে পাঁচ সমস্যার কথা বলেছেন, তার একটি চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে।
ব্যবসায়ীরা বন্দরে কন্টেইনার জট, ডেমারেজের কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক শিপিং লাইনসগুলোর সমস্যার কথা বলেছেন। ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট, শিপিং এজেন্ট, এনবিআর ও শিপিং মিনিস্ট্রিকে নিয়ে বসে আমরা এই সমস্যা নিয়ে আরেকটি মিটিং করব।
ব্যাংক ঋণ অনেক বেশি, ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফের কথা বলেছেন। গ্যাস- বিদ্যুতের দাম বেশি ও নিয়মিত গ্যাস না পাওয়ার কথা ব্যবসায়ীরা বলেছেন। ইন্টারনেটের বিকল্প একটা সিস্টেম চালু করা যায় কিনা বলেছেন। জেনারেল সিস্টেম বিকল হয়ে গেলে বিকল্প কোনো উপায় আছে কিনা। নিজস্ব একটা স্ট্যান্ডবাই সিস্টেম চালু করা যায় কিনা, সেই পরামর্শ এসেছে।
সালমান বলেন, এনবিআরকেন্দ্রিক সমস্যার কথাও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেছেন। এনবিআরকে নিয়ে সেকেন্ড আরেকটা মিটিং করতে চাই। তৃতীয় মিটিং করতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে। ব্যাংককেন্দ্রিক যেসব সমস্যার কথা (ব্যবসায়ীরা) বলেছেন, সেটা সমাধান করতে চাই।
ব্রডব্যান্ড ও আইসিটি বা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যবসায়ীরা কথা বলেছেন। আইসিটি নিয়েও বসতে হবে। ইন্টারনেট ছাড়া এখন ব্যবসা সম্ভব নয়। ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তারা ইন্টারনেটের ওপর ডিপেন্ডেন্ট আছে। ইকমার্স খাতের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাদা মিটিং করব। গ্যাস বিদ্যুতের সমস্যা নিয়েও আমরা আলাদাভাবে বসব। চেষ্টা করব যতটুকু সমাধান করতে পারি।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে ছাত্ররা চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে ফের মাঠে। ধীরে ধীরে তাদের আন্দোলনের মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘাতের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর থেকে ৬ জনের মৃত্যুর খবর আসে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা হয়, সেদিন মাঠে নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও। গোটা দেশে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে, এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় সম্পদে হামলা শুরু হয়। প্রাণহানির সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
রামপুরায় বিটিভি ভবন, মেট্ররেলের দুটি স্টেশন, বনানীতে সেতু ভবন, মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাব স্টেশন, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও ভাঙচুর হয় সেদিন।
পরদিন পরিস্থিতির অবনতি হলে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করা হয় সারা দেশে। দুই দফায় তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পুরো দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় কারফিউ শিথিল করে অফিস-আদালত ও কলকারখানা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলাচল শুরু হলেও ট্রেন চলাচল এখনো বন্ধ আছে।
এই কয়েক দিনের সংঘাতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে। তবে সরকারের তরফে নিহতের সংখ্যা ১৪৭ বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা আবারও সরকারের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেন, অনেকগুলো ভালো ভালো সাজেশন পেয়েছি। সব ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন তাদের সমর্থনের কথা। যদিও আমাদের এই সমস্যা হইছে এটা খুবই দুঃখজনক একটা ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেছে। কিন্তু আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এটা ওভারকাম করতে পারব। উনারা (ব্যবসায়ীরা) আমাদের সাথে আছেন, সব রকমের সহযোগিতা ব্যবসায়ীরা আমাদেরকে দেবেন।