ভোট বিরোধে ভুগবে আওয়ামী লীগ

10

রাহুল দাশ নয়ন

জাতীয় ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরোধ স্পষ্ট। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠ উন§ুক্ত থাকায় গ্রæপিং রাজনীতি চাঙ্গা হয়েছিল। অনেকেই দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করেছেন। কেউ কেউ জয়ীও হয়েছেন। যার প্রভাব পড়েছে চারধাপে অনুষ্ঠিত হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। প্রতিটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দুই নির্বাচন শেষ হলেও নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখনো উত্তাপ বিরাজমান। দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই নির্বাচন ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ নিরসন করা না গেলে আগামিতে সংগঠন চাঙ্গা করতে গিয়ে ভুগতে হবে আওয়ামী লীগকে- এমনটাই ইঙ্গিত মিলছে তৃণমূল থেকে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে।
ইতোমধ্যে বিরোধ মিমাংসায় দলের আটটি সাংগঠনিক টিমকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেয়া হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বরং উপজেলা নির্বাচন ঘিরে বিরোধ আরো বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় এক দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী, দলীয় প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কিছু কিছু মান অভিমান, অন্তর্কলহ বাড়ে। যার রেশ এখনো কিছু কিছু জায়গায় শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলায় যে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো আছে সেগুলো দ্রæত যাতে নিরসন করা হয় সেজন্য আমাদের নেত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।
অন্যদিকে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা দূর করা কঠিন। কখনো কখনো নিজেদের স্বার্থে কিংবা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে একমঞ্চে বসলেও নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ রয়ে যাবে। ভোট শেষে এখন সংগঠন গোছানোর যে সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ নিয়েছে সেখানে পদ ভাগাভাগিতে বিরোধ আরও বাড়বে।
চলতি সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তোলাই ছিল সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এলক্ষ্যে দলটির মধ্যে যারা ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী তাদের সবাইকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক নেতা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হন। এতে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন এবং দলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বে আছে এমন তিনজন নেতা জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেয়া নেতারা এখনো সেভাবেই আছেন।
সম্প্রতি শেষ হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় কোন্দলের প্রভাব পড়েছে। চট্টগ্রামের দু’একটি ছাড়া প্রায় সব উপজেলাতেই একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী বিরোধ নিরসন সম্ভব না হলে আগামিতে তার খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে- এমনটাই আশঙ্কা দলটির নেতা-কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। অনেক স্থানে নির্বাচনী উত্তাপ এখনো রয়ে যাওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের শঙ্কাও রয়েছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর আমরা সংগঠন সুসংগঠিত করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। তার আগেই যেখানেই বিরোধ আছে সেগুলো নিরসন করবো। দল সবাইকে নির্বাচন করার যে সুযোগ দিয়েছে তা কাজে লাগিয়ে অনেকেই নির্বাচিত হয়েছেন। এখন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে যাতে সংগঠন পরিচালনা করা যায় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ শুরু করবো’।