ভেজাল প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিন

3

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ভেজাল মসলার রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে। কাটের গুঁড়া, ঘাসের বীজ, ধানের তুষে রং মিশিয়ে তৈরি করা ভেজাল মসলা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন মিলে দিনরাত তৈরি হচ্ছে ভেজাল মসলা। মুদি দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো ভেজাল মসলার মূল ক্রেতা। দাম কম হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষ রান্নায় ভেজাল মসলা ব্যবহার করেন। বিভিন্ন সময়ে ভেজাল মসলা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়লেও জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ার-এমন অভিযোগও পাওয়া যায়। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামে খাদ্যপণ্যের পাইকারি বাজারেই গড়ে উঠেছে ভেজাল মরিচ-মসল্লার কারখানা। যেখানে করাতকলের কাঠের মিহি গুঁড়োর সঙ্গে রং মিশিয়ে বানানো হচ্ছে হলুদ ও মরিচের গুঁড়ো। আর এসব পাইকারি ও খুচরাবাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। বুধবার নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুস সোবহান খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এসব ভেজাল কারখানা আবিষ্কার করেন। তিনি কারখানাগুলোকে বড় অঙ্কের জরিমানা করে তাতে তালা মেরে দিয়েছে। তবে এসময় কারখানার কোন মালিককে পাওয়া যায়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দৈনিক পূর্বদেশকে জানান, কাটের ভুষিতে ক্ষতিকর রং মিশিয়ে মরিচ ও হলুদের গুঁড়া হিসেবে বিক্রি করছে। যা সাধারণ ক্রেতাদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভেজাল মসলা তৈরিতে কাপড়ের রং ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অব্যাহতভাবে ভেজাল মসলা খেলে ক্যানসার, হেপাটাইটিস ও কিডনি বিনষ্ট হতে পারে। ভেজাল মসলা কারখানার মালিকরা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এই ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ভেজাল মসলা উৎপাদনকারীদের অভিযোগ, ডিবির ক্যাশিয়ার প্রতি মিল থেকে মাসে ১০ হাজার, ফাঁড়ি আড়াই হাজার ও থানা পুলিশ ৫ হাজার টাকা করে সংগ্রহ। জানা গেছে, চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও রাজাখালী এলাকায় অনেক ভেজাল মসলা তৈরির কারখানা রয়েছে। যেসব কারখানায় ভেজাল ও মানহীন মসলা তৈরি হয় তাদের মধ্যে উলে­খযোগ্য হচ্ছে, লামাবাজারে আরিফ ও ইসলামের মিল, আসাদগঞ্জে আবদুল হাইয়ের মিল, খাতুনগঞ্জে বেলালের মিল, রাজাখালীতে হারুনের মিল, ফুলতলার মোস্তাকের মিল, জসিমের মিল, লিজা ফুডের হরিণ মার্কা ও বাকলিয়া বাইদ্যার টেকে ইদ্রিসের শাপলা মার্কা মসলা। এসব কারখানাসহ আরো অনেক কারখানা থেকে মসলার গুঁড়া বিভিন্ন এলাকায় খুচরা পাইকারি ও বিক্রেতাদের হাতে পৌঁছে যায়।
এসব কারখানায় ঘাসের বীজের সঙ্গে রং মিশিয়ে ভেজাল গুঁড়া মসলা তৈরি করা হয়। ঘাসের বীজ বা কাউন যা পাখির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তা ভেজাল মসলার মূল উপকরণ। ঘাসের বীজ গুঁড়া করে ক্ষতিকর রং মেশানো হয়। লাল রং মেশালে তৈরি হয়ে যায় মরিচের গুঁড়া আর হলুদ রং মেশালে একই গুঁড়া হয়ে যায় হলুদের। এর সঙ্গে কিছু শুকনা মরিচের গুঁড়া মেশালে মরিচের গুঁড়ায় হাল্কা ঝাল হয়। আর নকল হলুদের গুঁড়ায় কিছু আসল হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে দিলে ভেজাল মসলা হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এক মসলা ব্যবসায়ী জানান, গুঁড়া মসলায় যে রং মেশানো হয় তা কাপড়ে ব্যবহারের রং। নগরীর লয়েল রোডে এসব রং পাওয়া যায়। অথচ খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে যে রং ব্যবহার করা হয় তার দাম প্রায় দ্বিগুণ। অধিক লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কাপড়ের রং দিয়েই মসলা তৈরি করে যে কারণে জনস্বাস্থ্য ব্যাপক হুমকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিবছর রমজান ও ঈদ উল ফিতর কিংবা কুরবানি বা ঈদ উল আজহার উৎসব আসলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে জঘন্য ভেজাল ব্যবসায় লিপ্ত হয়। যা খেলে মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খোলে ঢলে পড়বে। যৌক্তিক বিচারে বলা যায়, প্রকৃতপক্ষে এরা খুনি। এদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া যারা এসব ভেজাল কারখানা বন্ধ না করে প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, তারাও একই দোষে দোষী। এদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি। আমরা মনে করি, স্থানীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে গভীর মনোযোগী হতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।