ভারী বৃষ্টি হলেই আগের মতো জলাবদ্ধতার শঙ্কা

5

এম এ হোসাইন

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুর থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়। এই সামান্য বৃষ্টিতেও নগরের কাতালগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। তইি ভারি বৃষ্টিপাত হলে নগরের নিম্নাঞ্চলে পূর্বের ন্যায় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা নগরবাসীর। ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের অধীনে চারটি খালের মুখে রেগুলেটরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প চালু করা হয়েছে। পাম্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি পার করে দেয়া সম্ভব হলেও জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব নয়।
ইংল্যান্ডের বেডফোর্ড কোম্পানির তৈরি চারটি পাম্প গত সপ্তাহে মরিয়ম বিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া ও ফিরিঙ্গিবাজার খালের রেগুলেটরে বসানো হয়েছে। অতিবৃষ্টি বা জোয়ারের কারণে জলাবদ্ধতা হলে শহরের পানি দ্রæত বের করে দেয়ার কাজ করবে এসব পাম্প। তবে শহরে এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতার জন্য অপর্যাপ্ত, সরু ও বন্ধ হয়ে পড়া নালাকে দায়ী করা হচ্ছে। পানি নালা দিয়ে খালে যেতে না পারার কারণে রাস্তায় ফুলে উঠছে। তাছাড়া অনেক এলাকায় অলি-গলিতে নালা-নর্দমার কাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। তাই এসব স্থানে সামান্য বৃষ্টিপাতেও জমে থাকা পানি রাস্তায় উঠছে। এতে জলাবদ্ধতার দেখা মিলছে। আর এই জলাবদ্ধতার জন্য পাম্প হাউজগুলো কোনো কাজে আসবে না। তবে খালের পানি দ্রæত অপসারণের প্রয়োজন পড়লে পাম্পগুলো চালু করা হবে। এসব পাম্পের প্রতিটিতে এক সেকেন্ডে প্রায় ২৮০ লিটার পানি অপসারণ করা যাবে। অর্থাৎ, প্রতি মিনিটে একটি পাম্পের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৮০০ লিটার পানি অপসারণ করা যাবে।
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, টানা বৃষ্টি ও জোয়ার হলে পানি দ্রুত সরিয়ে নিতে চারটি খালের মুখে রেগুলেটরে পাম্প বসানো হয়েছে। জোয়ার-ভাটার সময় পানি নিয়ন্ত্রণ করবে রেগুলেটর। অতি বৃষ্টি হলে তখন পাম্প চালানো হবে। পরিস্থিতির সাথে পাম্পের কার্যক্রম চলবে। পাম্প সব পানি সরিয়ে নিবে এমনটা নয়। রেগুলেটর কার্যকর আছে,রেগুলেটর পানি নিয়ন্ত্রণ করবে।
তিনি বলেন, খালে কোনো বাঁধ নেই। কাতালগঞ্জে যেখানে পানি উঠেছে সেখানে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছে। পাশে চাক্তাই খাল, সেখানে কিন্তু কোনো পানি নেই। তাহলে বুঝতে হবে পানি ড্রেনের কোথাও বন্ধ হয়ে আছে। ড্রেনের ওভার ফ্লো হয়ে রাস্তায় পানি উঠছে। ড্রেনের কাজ আমার না। এটা নিয়ে কি করা যায় সেটা চিন্তা করতেছি।
খালের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে প্রকল্পে কাজ করছিল সেনাবাহিনী। এসব বাঁধ অনেক সময় জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে বর্তমানে খালের মধ্যে কোনো বাধ নেই বলে জানিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। ফলে বাঁধের কারণে কোথাও জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্তু বৃষ্টির পানি নালা দিয়ে খালে প্রবেশ করতে পারছে না। নানা কারণে নালা বা ড্রেনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পানি। ফলে পানি নালা-ড্রেনে পানি আটকে জলাবদ্ধতার দেখা দিচ্ছে অনেক জায়গায়। এজন্য নালা বা ড্রেন পরিস্কারে কার্যকর উদ্যোগও আশা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতামুক্তকরণে প্রকল্প দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প সিডিএর ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, স¤প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বাস্তবায়ন শুরু হয়। তাছাড়া সিডিএ’র আরো একটি প্রকল্প, সেটি হচ্ছে ‘কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প। ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুনে শুরু হয়ে এখনো চলমান আছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে চসিকে আছে ‘বহদ্দারহাট বারৈপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্প। ২০১৪ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পটির কাজও চলমান আছে। এছাড়াও নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ‘মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালে একনেকে অনুমোদন পায়।