ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন শেখ হাসিনা

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লাখ লাখ মানুষ যখন গণভবনের দিকে যাচ্ছিল তখন হাসিনা ভয়ে পালিয়ে গেলেন। পালিয়ে গেলেও চুপ করে বসে নেই। ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। জনরোষ থেকে রক্ষা পেতে শেখ হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন। অথচ উনি বড় গলায় বলতেন, আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমি পালাবো না। কিন্তু সত্যি সত্যি তিনি লেজ গুটিয়ে পালিয়েছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়ার কোটা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে যান বিএনপির মহাসচিব। সেখান থেকে জাফরপাড়া দারুল উলুম বহুমুখী কামিল মাদ্রাসায় গিয়ে এক স¤প্রীতি সমাবেশে যোগ দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তাকে সুসংহত করার জন্য স¤প্রীতি সমাবেশ করছি।মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গুম, খুন করছে। লাখ লাখ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মারা এখনও রয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি, সব পুলিশ, নিরীহ শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে। এদের মূলহোতা হাসিনার বিচার করতে হবে। তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের লুটপাট ও খুনের বিচার করতে হবে। ইতোমধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। আল্লাহ করে দিয়েছেন। ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তারা আজ নিজেরাই পালিয়েছে, আর দেশের মানুষ জেগে উঠেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আবু সাঈদ বুকের রক্ত দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যে ইতিহাস হচ্ছে তরুণদের আত্মত্যাগের ইতিহাস। আবু সাঈদের কারণে লাখ লাখ মানুষ জেগে উঠেছেন। সেই ভয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছেন।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবু সাঈদের বাড়িতে আসেন। সেখানে তিনি বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত শেষে সাঈদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও নাজিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছিল, সেই সময় গত ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২২ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
গণহত্যার দায় থেকে রক্ষা পাবে না : এর আগে শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে যাওয়ার পথে দুপুরে নীলফামারীর সৈয়দপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ন্যায্য অধিকারের দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার দায়ে শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচার করা হবে। বিদেশে পালিয়ে থেকে যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, গণহত্যার দায় থেকে তারা রক্ষা পাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই বাংলার মাটিতে তাদের শাস্তি কার্যকর করা হবে। পলাতক হাসিনা ও তার ছেলে জয় বিদেশে থেকেই এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারা পূর্বের মতোই মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত ও দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’