বৌদ্ধ বিহারের দখল নিয়ে দু পক্ষের সংঘর্ষ

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর নন্দনকাননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের দখল নিয়ে আবারও দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বৌদ্ধ সমিতির লোকদের বিহার থেকে বের করে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ৪-৫ জন সদস্যও আহত হন। আহতদের নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন ভিক্ষু করুণানন্দ মহাথেরো, অগ্রলংকার থেরো, উত্তমানন্দ মহাথেরো, রাহুলবোধি থেরো, ত্রিপুরানন্দ থেরো, বৌদ্ধ সমিতির অপু বড়ুয়া, শিমুল বড়ুয়া, অজিত বড়ুয়া, আদর্শ বড়ুয়া, নিপুতি বড়ুয়া, স্বপন বড়ুয়া ও প্রাণ মৃগাংক বড়ুয়া।
মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৌদ্ধ মন্দিরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ সমিতির মধ্যে কয়েক মাস ধরে বিরোধ চলে আসছে। বৌদ্ধ সমিতির লোকজন গতকাল বিহারে প্রবেশ করে তাদের অফিস পুনঃদখল করে। খবর পেয়ে জিনবোধি ভিক্ষুর নেতৃত্বে সমিতির লোকদের মারধর করে মন্দির থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের ৪-৫ জন সদস্যও আহত হন।
ভিক্ষুদের অভিযোগ, গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার দখলের জন্য অবৈধ বৌদ্ধ সমিতির কর্মকর্তারা শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালায়। এসময় তারা চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের নিচতলায় রক্ষিত বুদ্ধমূর্তি ভাঙচুর করে কক্ষ দখলে নেয়ার চেষ্টা করে। বিহারে অবস্থানরত আবাসিক ভিক্ষুদের কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয় এবং ভিক্ষুদের মারধর করে। এতে হামলায় ৫ জন ভিক্ষু গুরুতর আহত হন। আহত ভিক্ষুরা হলেন করুণানন্দ মহাথেরো, অগ্রলংকার থেরো, উত্তমানন্দ মহাথেরো, রাহুলবোধি থেরো, ত্রিপুরানন্দ থেরো। বর্তমানে আহত ভিক্ষুরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সন্ত্রাসী কায়দায় ভিক্ষুদের আবাসিক কক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দখলের অপচেষ্টা চালান। বৌদ্ধ মন্দির ও ভিক্ষুদের উপর হামলার সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার বৌদ্ধ নর নারী বৌদ্ধ বিহারে জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে অবৈধ দখলবাজ বৌদ্ধ সমিতির অবৈধ ও কথিত নেতারা বৌদ্ধ নর নারীদের রোষানলে পরে এবং পরবর্তীতে পুলিশের সহায়তায় তারা বৌদ্ধ বিহার ত্যাগ করে।
বিহারের উপাধ্যক্ষ জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, বৌদ্ধ বিহার কারো সম্পত্তি নয়। কোনো সংগঠন করার জায়গাও না। কিন্তু একটা সংগঠন ভিক্ষুদের ওপর হামলা করে বিহার দখলে নিতে চায়। বৌদ্ধ সমিতির লোকজন নিজেদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের ওপর দোষ চাপাতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে বৌদ্ধ সমিতির নেতা শিমুল বড়ুয়া বলেন, কয়েকজন ভিক্ষুর নেতৃত্বে কিছু কুচক্রী বিহারটি ক্ষুক্ষিগত করে রাখতে চাইছে। সমিতি স্বচ্ছতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিহার পরিচালনা করে আসছিল। তারা আমাদের মারধর করে বিহার থেকে বের করে দেয়।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের দখল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে প্রথম সংঘাত হয়। এরপর থেকে এই বৌদ্ধ বিহারের দখলকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।
এদিকে, বৌদ্ধ সমিতির নেতাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ও ভিক্ষুদের উপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকালে এক সমাবেশ বৌদ্ধ বিহারের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ও একুশে পদকে ভূষিত ড. জিনবোধি ভিক্ষু, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ড. সংঘপ্রিয় মহাথেরো, সাবেক মহাসচিব এস লোকজিৎ মহাথেরো, তিলোকাবংশ মহাথেরো, মৈত্রীপ্রিয় মহাথেরো, ড. দীপংকর থেরো, এস ধর্মবোধি থেরো, অধ্যক্ষ ড. অর্থদর্শী বড়ুয়া, স্থপতি বিজয় তালুকদার, সরোজ বড়ুয়া, শেলী বড়ুয়া প্রমুখ। চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ভাঙচুর এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ ১২ মে রবিবার বিকাল চারটায় বৌদ্ধ বিহারের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা ও চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার দায়ক দায়িকাবৃন্দ।