বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতা এবং দেশ গঠনে তরুণদের অংশগ্রহণ…

3

মিঞা জামশেদ উদ্দীন

চলমান ছাত্র-আন্দোলনে দেশ টালমাটাল। ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক বিজয়ের পর পুলিশ-ট্রাফিক স্টেশনচ্যুত হলে পরিবহন জগতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নতুনভাবে সৃষ্ট সহিংসতায় সব দিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ৭ আগস্ট থেকে স্বয়ং শিক্ষার্থীরা মন্দির মসজিদের নিরাপত্তাসহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নেমে আসে। সপ্তাহব্যাপী জনহিতকর কাজে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছে তরুণ যুবক ছাত্র সমাজ। সত্যি কথা কী, তাদের এ কর্মযজ্ঞ সর্বজন প্রশংসিত হয়। সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীরাও পিছু নেই। তারাও সকলপ্রকার জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা ঝেরে ফেলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে, এসকল সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হয়। যা ছিল অকল্পনীয় ও বিস্ময়কর। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ছাত্রীদের ওই কর্মতৎপরতা আশাব্যঞ্জক। যা কী-না, এ সকল আর্ত-মানবতার সেবায় পরীক্ষামূলক নিয়োজিত করা যেতে পারে। পাশাপাশি বিএনসিসি (ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর), রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, রোভার স্কাউট, গার্লস গাইড ও রেইঞ্জার দলের র তরুণ সদস্যদেরও এসকল সেবামূলক কাজে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে!
পর্যবেক্ষণ: আমাদের জয়া মামণি। সে একটি স্বায়ত্তশাসিত স্কুলে পড়ে। তারা মা-মেয়ে বাসায় থাকে। বাসা বলতে জয়ার নানাবাড়িতে, অর্থাৎ তার বৃদ্ধা নানির সেবাশুশ্রƒষাসহ দেখভালে নিয়োজিত। অবশ্য জয়ার মা একটি স্কুলে পড়ান। ওই স্কুলটিও তার নানাবাড়ির সন্নিকটে। এতে করে জয়ার বৃদ্ধা নানি অর্থাৎ জয়ার মা- তাঁর মাকে দেখার সুবর্ণ সুযোগ পান। সেটি ছিল নাড়ির টান; বিশেষ করে নারীদের কর্মস্থল বাপের বাড়ির কাছাকাছি হলে এসবের ব্যতিক্রম-কিছু ঘটে না; সঙ্গে জয়ার স্কুলও অদুরে অবস্থিত; সব মিলেই জয়ার পড়ার বিষয়টি প্রাধান্য পায়; অর্থাৎ সেদিকে তীর্যক দৃষ্টিতে খেয়াল রাখা হয়। তাই নিজেদের ভালো-মন্দের দিকটা গৌণ; অতঃপর যেজন্য এ-অবতারণা- ছাত্র-আন্দোলন বিষয়ে দুই-একটা অভিমত প্রকাশে। এর মধ্যে কোটা- বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন তুঙ্গে। মনটাও কেমন খাঁ-খাঁ করছে- মেয়ের সাথে দেখা হয়নি বেশ কয়দিন হয়ে গেল। ঠিকই-এ অবস্থয় একদিন মেয়ে জয়া মামণিকে দেখতে ছুটে যাই- ‘মামণি, কেমন আছ?’ ‘আব্বু, আমি ভালো নেই; আমি আন্দোলনে যাবো, মিছিলে যাবো!’
আমি তার মুখে হঠাৎ এ-কথা শুনে ‘থ’ বনে যাই এবং বেশ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি-অনেকটা বুক থরথর করে কাঁপছে এবং ভাবতে লাগলাম, মেয়ে এসব কী বলে। পিচ্চি-একটি মেয়ে; সবেমাত্র সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে; আবার আতঙ্কিত হই : যদি চুপিসারে অংশ নেয়; তা হলে এ উদ্ভট পরিস্থিতিতে নিজেকেও রক্ষা করতে পারবে না। সে কী-বা বোঝে এসব কঠিন দাবি-দাওয়া বা যৌক্তিকতা; কিন্তু তার মধ্যে প্রচন্ড আবেগ কাজ করছে, সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া ছাত্ররা অকাতরে প্রাণ দিয়ে যাচ্ছে সবই তো তার কাছে দিবালোকের মতো দৃশ্যমান। হ্যাঁ, কোটা কেন হবে না; মেধাভিত্তিক নিয়োগ কেন হবে না? সরকার কেন তা মানবে না? অথচ সরকার উল্টো জবরদস্তি-দমনপীড়ন চালাচ্ছে ছাত্রদের ওপর! যা কি-না প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার সমতুল্য- তা হলে কি কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যাবে না? মিটমিট চোখে তাকাই। সবই যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। আবারও মাথার ওপর হাত বুলাতে থাকি এবং ভাবনার ঘোরে নিমজ্জিত- নিজেও ’৯০-এর স্বৈরাচার-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে নেতা ছিলাম। কেন্দ্রীয় নেতা না-হলেও থানা-পর্যায়ে স্বীয় দায়িত্ব পালন করি। আন্দোলনের শেষের দিকে ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। শহরের উপকণ্ঠে সীতাকুন্ড থানা। এ থানা-শাখার আহব্বায়ক ছিলাম এবং আন্দোলনকে যৌক্তিক পথে এগিয়ে নিই। অবশেষে ৯ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে সেনা-শাসনের অবসান হয়। অবশ্য গৌরবের সেই ছাত্র-রাজনীতির পর প্রত্যক্ষভাবে আর রাজনীতির সাথে জড়াইনি। তবে সুযোগ- যে ছিল না তা নয়; অনেক পদপদবিসহ বড়-বড় লোভনীয় প্রস্তাব আসে, এসব স্বজ্ঞানে প্রত্যাখ্যান করি। কারণ, এ রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতি চরম নৈরাজ্যপূর্ণ এবং অস্থিতিশীল। সা¤্রাজ্যবাদীদের খেয়াল- খুশিতে চলে বা তাদের তাসের তুরুপ ; নিজেদের ইচ্ছে বলতে, ভালো-মন্দ কিছু করার থাকে না, পদে পদে বাধা…
যাক, সেই শৌর্য-বীর্য কাজ করেছে বৈকি; না হয় এ বয়সে এ ভাবনা; নিজেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালে ছাত্র-রাজনীতিতে জড়ায়। নবম শ্রেণিতে পড়াকালে সরাসরি কেন্দ্রের পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়; রীতিমতো রাজধানী-ঢাকা গিয়ে কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচিতে অংশ নেয়া; সে কী আবেগ-উচ্ছ¡াস। বাবা কতশ-বার বারণ করতেন, রাজপথে মিছিল-মিটিংয়ে অংশ না-নিতে। তাতেও নিবৃত্ত করতে পারেননি। শেষতক মাকে কড়া ভাষায় বলে দিলেন, বাড়িতে এলে যেন ভাত-পানি না দেয়; এমনকি ঘুমাতেও না দিতে বারণ করেন ঘরে। একেবারে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা জারি হলো; রীতিমতো রাতে জেগে বারবার দেখে আসতেন, চুপিসারে ঘরে ঘুমাচ্ছি কি-না; ভেতর থেকেও দরজায় সিটকিনি লাগানো থাকতো ! যেন কোনোভাবেই টেনে হেঁচকিয়ে প্রবেশ করতে না পারি। আহ্; মায়ের মন এ বারণ মানে? রাতে ছেলে কোথায় ঘুমাবে, কোথায় খাবে, এ জল্পনা-কল্পনায় মায়েরও ঘুম আসে না। ঠিকই কোনো একসময়ে দরজার সিটকিনি খুলে রেখে যেতেন! আর ভাত-তরকারি প্লেট দিয়ে ডেকে রেখে যেতেন টেবিলে। নিজেও চুপিসারে অন্ধকারে হাতিয়ে হাতিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম! বাবা কখনো টের পেলে, সে কী শোরগোল আর বকাঝকা! কী আর করার আছে বলুন? হাত-মুখ ও শরীর কাঁথা জড়িয়ে, না শুনি অবস্থায় মৃতের মতো পড়ে থাকতাম। আবারও মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকি : ‘মামণি, এসব বলো না, বাবার মনে কষ্ট আসবে। এখনো তোমার এসবের বয়স হয়নি; এসব উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের দাবি-দাওয়া এবং তা তাদের জন্য প্রযোজ্য।’
‘না আব্বু, আমি যাবো; ছাত্ররা অন্যায় কিছু বলছে? মেধাভিত্তিক নিয়োগ কেন হবে না? এটি শতভাগ বৈষম্য হচ্ছে না?’ ‘হ্যাঁ মামণি, তোমার কথা শতভাগ সঠিক। কেন বৈষম্য হবে? আমাদের দাবিও সেটি।’ মেয়ের মতের সাথে একমত পোষণ করে তার দৃষ্টিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করি। বলি, ‘কিন্তু মামণি, আসন সংখ্যা যে সীমিত; আর যারা বাদ পড়ে তারা কি কম মেধাবী ; দেখো এযাবৎ যেসব মহৎ এবং শ্রেষ্ঠতর কিছু আবিষ্কার হয়েছে, সবই অপ্রাতিষ্ঠানিক ও স্বশিক্ষিত জনেরাই করেছেন, আর এসবের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। তাদের অন্যতম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না; অথচ তাঁর যতসব কৃতিত্ব এবং সৃজনশীল সবকিছুকে ছেড়ে গেছে; এখনো তাঁর সৃষ্টিশীলতা অদ্বিতীয় ও অপ্রতিদ্ব›দ্বী। অনেকেই জাতীয় কবির সৃজনশীল কর্মের ওপর গবেষণা করে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন এবং ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে দেশ -বিদেশে সুনামের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন শয়ে শয়ে জন। অসংখ্য আমলাও রয়েছে নজরুলের উপর গবেষণাকর্ম করে প্রতিষ্ঠিত। একথায় সবাই মেধাবী।’ ‘না-না, আমি তোমার কথা মানবো না;’ আবারও কৌশল করি- ‘মামণি তোমার জন্য অনেক ফল এনেছি, থলের মধ্যে আছে দেখো পেয়ারা, আমড়া, আম, জামরুল, গাব। এগুলো শেষ হলে আবারও আনবো- মামণি-ল²িমণি- আদোমণি আমার।’
এভাবে বলেকয়ে সান্ত¦না দিতে চেষ্টা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, দাবিগুলো কেনবা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলে; বারবার ভাবনায় ঘুরপাক খেতে হচ্ছে- হ্যাঁ, তাদের তো জন্ম থেকে অর্থাৎ ৪-৫ বছর বয়স থেকে নিরবচ্ছিন্ন মেধার জন্যই লড়াই শুরু করতে হয়। আর সব জায়গা-ই তীব্র লড়াই; ভর্তি বলো, ক্লাসে লেখাপড়ায়, সর্বত্র মেধা; বাবা-মারও প্রাণপণ চেষ্টা থাকে, সন্তান যেন মেধাবী হয়। প্রয়োজনে একজনের স্থলে তিনজন শিক্ষক রাখা হবে; তবুও যেন সন্তান মেধাবী হয়। দেখা যায়, অনেক পরিবার নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে ঘুণাক্ষরে চিন্তা করে না; তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কী-বা দোষ; এ দাবি তাদের! তাদের দাবির ওপর এমন খড়গ এবং জবরদস্তি চলে না। প্রয়োজনে প্রাণ যেতে পারে, অধিকার প্রতিষ্ঠা থেকে পিছু-পা হবে না, এ হলো তাদের পণ। যেটি চিরন্তন সত্য। ২ আগস্ট থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ি। অনেকটা ঘরে-বাহিরে। ৪ আগস্ট থেকে আরো ভয়াবহতা দেখা দেয়। অনেকটা দৌড়ের মধ্যে ছিলাম। সিদ্ধান্ত নেই, বড় আপার বাসায় চলে যাওয়ার, না হয় এভাবে একা একা পড়ে থাকলে আরো শঙ্কা হবে- মরে পড়ে থাকলেও জানার কেউ থাকবে না। শেষমেশ সন্ধ্যায় বড়বোন আনোয়ারা বেগমের বাসায় চলে যায়। আপাও একা, একমাত্র ছেলে নুরুউদ্দিন জুয়েল আমেরিকায় থাকে। বড় ভাগিনা সালাউদ্দিন সোহেল একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। একেবারে তরুণ বয়সে তার জীবনে যা ঘটে। সে পেশায় ক্যাপ্টেন (জাহাজ) ছিল। এভাবে তার না-ফেরার দেশে যাওয়ার ঘটনা, কোনোভাবেই আত্মীয়-স্বজন মেনে নিতে পারেনি ; ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস আসে… বড়বোনের চোখের জল শুকায় না। ছেলেকে বিয়ে পর্যন্ত করাতে পারেননি। সেই বেদনা প্রকাশের ভাষা নেই। অতঃপর ৬ আগস্টের দিকে একটু একটু নড়েচড়ে উঠি এবং সদর সীতাকুন্ড বাজারে যাওয়া। তখন বিজয়ের উল্লাস বইছে চারিদিকে ছাত্র-জনতার। ৭ আগস্ট চট্টগ্রামে যাওয়া। রীতিমতো বিস্ময়কর ঘটনা। পথে পথে ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ততা। ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি), রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য এবং স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সেবামূলক কাজে ব্রতী হলো। নগরের ঝোপঝাড়, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করা। মেয়েদেরও উদ্যামতা দেখা গেছে। হ্যাঁ, তারা কেন পিছু পড়ে থাকবে। টাইগারপাস, আমবাগান-রেলক্রসিং। ওখানে এক স্কুল-ছাত্রকে দেখলাম, সিগনাল দিয়ে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। ছেলেটির বয়স সর্বোচ্চ ১৩ বছর, কোনো এক স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র হবে। কিন্তু শরীরে বেশ মেদবহুল। চোখও বেশ বড়সড় ডাগর ডাগর। গাড়ি থেকে উঁকি দিয়ে দেখি ছেলেটির অবয়ব এবং একনিষ্ঠতা। সেও ফেল ফেল চোখে তাকায় দিগ্বিদিক। নিজেও নড়েচড়ে ওঠে ভাবি, আহ্; মাতৃভুমির টান; একটি বিকল্প প্রস্তাব আছে, এসকল শিক্ষার্থীদের থেকে বেছে বেছে ট্রাফিক পদে নিয়োগ দিতে পারে। তাদের মধ্যে ছাত্রীরাও থাকলে মন্দ হয় না। তাদেরও সম পদে নিয়োগ দিতে পারে। তবে, দেশে কোথাও নারী ট্রাফিক নেই- সে ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। হ্যাঁ, পরীক্ষামূলক দেখা যেতে পারে, তারই স্বাক্ষর রাখতে পারবে, চাঁদাবাজি- উৎকোচ আর নয়; সকল অবৈধপন্থা বন্ধসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক এ পিচ্চি শিক্ষার্থী অন্তত তা জানান দেয়। শিক্ষার্থীদের আরেকটি বিষয়ে লক্ষণীয় ছিল, দেশের সর্বত্র রাঙিয়ে দেয়া।
চট্টগ্রামে একেখান, ইস্পাহানির মোড়, নিউ মার্কেট, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, ওয়াসা, কাজীর দেওড়ি, মেডিকেল ও প্রবর্তক মোড়, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকাসহ নগরজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে তাদের আবেগ প্রস্ফুটিত হয়েছে। একই চিত্র রাজধানীসহ সারা দেশেও দেখাযায়। তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে রাঙিয়ে দেয় পাড়া-মহল্লা শহর-নগর। যেন তাদের হৃদয়ের-আকুতি। তুলির ক্যাম্পাসে হাজারো বিমূর্ত শিল্প ফুটে ওঠে। চট্টগ্রামে আসকার-দীঘির পূর্ব-দক্ষিণ পাড়ের কোণে অর্থাৎ সার্সন রোডের পাহাড় ঘেরা দেয়ালে আঁকা চিত্রকর্ম ও স্লোগান পথচারীকে দারুণভাবে ভাবায়। এই আমাদের দেশ/ বাবা দেখ হেলিকপ্টার/ ইনকিলাব জিন্দাবাদ / সুবোধ তুই ফিরে আয়। তার মধ্যে ‘সুবোধ তুই ফিরে আয়।’ এই ¯েøাগানটি একসময় রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কিত ছিল হঠাৎ চোখে পড়লে থমকে দাঁড়িয়ে দেখা হতো, কে সে সুবোধ যুবক? না। সুবোধ কোনো বালক-যুবক নয়; এ নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না।
অদ্ভুতভাবে ৫-৭ বছর পূর্বের সেই সুবোধ বালক, ৫ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ! অর্থাৎ ছাত্র-আন্দোলন দানা বাঁধে-এ চেতনায়। তারা আরো লেখে, ‘কে দেয় সাজা, আমরা মুক্ত-স্বাধীন, আমার রক্তে স্বাধীনতা।’ হ্যাঁ, তারা স্বাধীন ; মা-বাবা ও শিক্ষকের শাসন আর নয়, তারা মুক্ত, বিহঙ্গ, অবারিত পৃথিবী। তারা সাজাবে দেশ, কাল ও সমাজ।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক, কবি ও সাংবাদিক