বে-টার্মিনালে ৬৫ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম বন্দরের মেগা সম্প্রসারণ প্রকল্প বে-টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে ৬৫০ মিলিয়ন অর্থাৎ ৬৫ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। যা দেশীয় মুদ্রায় ৭ হাজার ৬৩৮ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। গতকাল শনিবার ব্যাংকটির বোর্ড অফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরস এ ঋণ অনুমোদন করে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতা এবং বন্দরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি ব্যয় কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত বিনিয়োগও গতিশীল হবে।
সরকারের এই প্রকল্পের আওতায় দুটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং একটি তেল ও গ্যাস টার্মিনাল উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যার অধীনে সমুদ্র স্রোত ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া থেকে বন্দরকে রক্ষা করতে ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জলবায়ুুসহিষ্ণু বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পের অংশ হিসেবে বন্দরের প্রবেশদ্বার, অববাহিকা ও সংযোগ-চ্যানেলগুলো খনন করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, এই বে টার্মিনালের মাধ্যমে প্যানাম্যাক্স জাহাজের মতো বড় আকারের জাহাজ বন্দরে ঢুকতে পারবে। সেই সঙ্গে এসব জাহাজে মালামাল ওঠানো-নামানোর সময় কমবে। ফলে প্রতিদিন আনুমানিক ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু এই বন্দরের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। বে টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবহণ ব্যয় ও সময় কমিয়ে আনার মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতার উন্নতি হবে, পরিবহণ ব্যয় কমবে এবং বিশ্ববাজারে নতুন সুযোগ উন্মোচিত হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটি কন্টেইনার টার্মিনাল উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করবে।
এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরে এ বন্দরে নৌ পথের পাশাপাশি সড়ক এবং রেল যোগাযোগের সুবিধাও থাকবে। আর এখানে বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হবে ৫০ লাখের বেশি। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ লাখ।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট এবং প্রকল্পের প্রধান হুয়া টান বলেন, বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর সংযোগ উন্নত করতে অবদান রাখবে।
বে-টার্মিনাল বাংলাদেশের মোট কন্টেইনারের ৩৬ শতাংশ হ্যান্ডলিং করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শিপিং কোম্পানি, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক ও পণ্যবাহী ফরওয়ার্ডারসহ ১০ লাখের বেশি মানুষ এর মাধ্যমে সরাসরি উপকৃত হবে বলে।
উল্লেখ্য, এর চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ (এডি পোর্টস)। গত ১৬ মে ঢাকার একটি হোটেলে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল এবং আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার সাইফ আল মাজরুই সমঝোতা স্মারকে সই হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বে টার্মিনালে’ চারটি টার্মিনাল তৈরি করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়েনের সিদ্ধান্ত হলেও সেটিতে পরিবর্তন এসেছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, টার্মিনালটি নির্মাণ ও পরিচালনা করবে আবুধাবি পোর্টস গ্রুপ। আর দ্বিতীয় টার্মিনাল পিএসএ সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ-পরিচালনার সিদ্ধান্ত আছে। তৃতীয় টার্মিনালটি আমিরাত ভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়োর্ল্ডের মাধ্যমে নির্মাণ-পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ টার্মিনালটি হবে তেলভিত্তিক বা ট্যাংক টার্মিনাল। সেটি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইস্টকোস্ট গ্রুপ। এর সঙ্গে থাকছে বিদেশি বিনিয়োগ।