বেনজীরের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে

6

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে দুদক।
হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদের নামে মোট ৯ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৬৫ টাকা মূল্যের, তার স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে মোট ২১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৩ টাকা মূল্যের, তাদের জ্যেষ্ঠ কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে মোট ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৯ হাজার ৬৯৬ টাকা মূল্যের এবং মেঝো কন্যা তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে মোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, স্থাবর সম্পদের দলিলে প্রদর্শিত মূল্য এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
এছাড়া অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, (১) বেনজীর আহমেদের নামে বান্দরবান পার্বত্য সদর উপজেলার ৩৯৪ নম্বর সুয়ালক মৌজার দাগ নম্বর ৬১৪, হোল্ডিং নম্বর ৭২০ এর অন্দর ২৫ (পঁচিশ) একর জমি লিজ গ্রহণ করেন (২) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী মিসেস জীশান মির্জার নামে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার দোশরপাড়া ও বালুচর মৌজার ধলেশ্বরী সমবায় সমিতি লিমিটেডে একটি করে মোট ২টি প্লট (জমির পরিমাণ ১৪ কাঠা) রয়েছে (৩) জীশান মির্জার মালিকানাধীন প্লট নম্বর ১/এ, রোড নম্বর ১০/এ, সেক্টর ১১, উত্তরা, ঢাকা মৌজা বাইলজুরী, থানা উত্তরা, উত্তরা আবাসিক এলাকার ৩ কাঠা জমি ও এর উপরিস্থিত ৭ তলা বাড়ি রয়েছে এবং (৪) মিসেস জীশান মির্জার মালিকানাধীন হোল্ডিং নম্বর ৫৩, রোড নম্বর ৯, ব্লক-খ, পিসি কালচার হাউজিং, আদাবর, ঢাকার ফ্ল্যাট ন এ/১, বি/১, এ/৩, বি/৩, এ/৫, বি/৫ সমূহ রয়েছে, কিন্তু এসব সম্পদের মূল্য কোথাও উল্লেখ নেই এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। তবে যাচাই অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী বা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিমাপ গ্রহণপূর্বক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে উল্লিখিত সম্পদের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মূল্য আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত সম্পদের তথ্য ছাড়াও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে-বেনামে, দেশে-বিদেশে আরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায়, তাদের বরাবরে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(১) ধারা মোতাবেক পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির সুপারিশসহ গত ৩ জুন তারিখে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
পরে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, আজ (রোববার) দুদকের এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এর আগে ২৩ এপ্রিল সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধনে দুদক যে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। দুই মাসের মাসের মধ্যে কমিটিকে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম. সারওয়ার হোসেন ও মনোজ কুমার ভৌমিক। বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক ও মো. সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
শুনানিকালে বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রিটকারীর আইনজীবী এম. সারওয়ার হোসেন। শুনানিতে তিনি বলেন, দুটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরও দুদক স্বউদ্যোগে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে গত ৪ এপ্রিল দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় গত ১৮ এপ্রিল বিবাদীদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। ২২ এপ্রিল দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে।