বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা

2

বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে মানবিকের শিক্ষার্থী সংখ্যায় বেশি হলেও নিয়োগের সুপারিশে এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা। গত ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসের আবেদন থেকে শুরু করে নিয়োগের সুপারিশ পর্যন্ত ধাপগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আবেদনকারী হিসেবে মানবিক বিভাগের প্রার্থীরা সংখ্যায় বেশি হলেও সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থীরা বেশি।
ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এককভাবে বিজ্ঞান বিভাগ তো এগিয়ে রয়েছেই; চিকিৎসা ও প্রকৌশলসহ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা যুক্ত করলে দেখা যায়, উত্তীর্ণদের মধ্যে ৬৫ শতাংশেই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়া বিবাহিতদের তুলনায় অবিবাহিতরাই বেশি সুপারিশপ্রাপ্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (বিপিএসসি) ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রথম দিনে এ বার্ষিক প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করা হয়। ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার ডিসিপ্লিনভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আবেদনকারী ৪ লাখ ৪ হাজার ৫১৩ প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের প্রার্থী ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯২ (৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী ৯১ হাজার ৫৩৪ (২২ দশমিক ৫৭ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রার্থী ৮৭ হাজার ৮২৮ (২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের প্রার্থী ৩৬ হাজার ৯৮ (৮ দশমিক ৯০ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রার্থী ২২ হাজার ৭১৫ (৫ দশমিক ৬০ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের প্রার্থী ১৩ হাজার ৮৪৬ (৩ দশমিক ৪১ শতাংশ) জন। আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্যে মানবিক বিভাগের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি এবং দ্বিতীয় অবস্থানে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী।
প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ ২১ হাজার ৫৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ৬ হাজার ৮৩০ (৩২ দশমিক ৪৪ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের ৬ হাজার ৫০০ (৩০ দশমিক ৮৭ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ৫৬৫ (১২ দশমিক ১৮ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের প্রার্থী ২ হাজার ৯৫৪ (১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রার্থী ৯৯৮ (৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের প্রার্থী ১ হাজার ২০৯ (৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ) জন। প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণদের মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মানবিক বিভাগ এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগ।
আর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৩ হাজার প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের প্রার্থী ৩ হাজার ৭৪৬ (২৮ দশমিক ৮২ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী ৪ হাজার ২৪৯ (৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ) ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১ হাজার ৫৪২ (১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের ২ হাজার ২৩৫ (১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ), চিকিৎসা বিভাগের প্রার্থী ৪২৮ (৩ দশমিক ২৯ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের প্রার্থী ৮০০ (৬ দশমিক ১৫ শতাংশ) জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের সবচেয়ে বেশি এবং দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মানবিক বিভাগ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
দুই ধাপের পরীক্ষা শেষে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর সুপারিশপ্রাপ্ত ২ হাজার ৫১৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ৫৮৮ (২৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের ৯১১ (৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ২২৬ (৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের ৪২৬ (১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের ২৯৭ (১১ দশমিক ৮০ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের ৬৮ (২ দশমিক ৭০ শতাংশ)।
ফলাফল অনুযায়ী, সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি (৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ)। বিজ্ঞানের অন্যান্য ডিসিপ্লিন যোগ করলে এই হার দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশে।
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনকারী ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে মানবিকের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৮ (৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের ১ লাখ ২ হাজার ১৮ (২৫ দশমিক ২২ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১৬ হাজার ৮২৩ (২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের ৪৭ হাজার ৩১৫ (১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের ১৫ হাজার ৬৬৫ (৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের ১৬ হাজার ৯৫২ (৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ) জন।
৪১তম বিসিএসের মতোই ৪৩তম-তে মানবিক বিভাগের সবচেয়ে বেশি এবং দ্বিতীয় অবস্থানে বিজ্ঞান বিভাগ।
প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ ১৫ হাজার ২২৯ জন প্রার্থীর মধ্যে মানবিকের ৪ হাজার ৭০০ (৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ), বিজ্ঞানের ৪ হাজার ৭৪৯ (৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষার ১ হাজার ৮৬২ (১২ দশমিক ২৩), প্রকৌশল বিভাগের ২ হাজার ৫১৮ (১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের ৪০৩ (২ দশমিক ৬৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের ৯৯৭ (৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ) জন। প্রিলিমিনারি টেস্টে ৪১ তম-এ মানবিক বিভাগ বেশি হলেও ৪৩তম এ প্রথম অবস্থানে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী।
লিখিত পরীক্ষায় পাস করা ৯ হাজার ৮৪০ জন প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ২ হাজার ৫১০ (২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী ৩ হাজার ২৬৯ (৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১ হাজার ১৫৭ (১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের ১ হাজার ৯১৮ (১৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের ২৯৯ (৩ দশমিক ০৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের ৬৮৭ (৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ) জন।
প্রিলিমিনারি টেস্টের ধারাবাহিকতায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি।
৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগের ৫১৭ (২৩ দশমিক ৯০ শতাংশ), বিজ্ঞান বিভাগের ৮২৫ (৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ), ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১৭৭ (৮ দশমিক ১৮ শতাংশ), প্রকৌশল বিভাগের প্রার্থী ৪৯৯ (২৩ দশমিক ০৭ শতাংশ), চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রার্থী ১০০ (৪ দশমিক ৬২ শতাংশ) এবং অন্যান্য বিভাগের প্রার্থী ৪৫ (২ দশমিক ০৮ শতাংশ)। সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থী সবচেয়ে বেশি (৩৮ দশমিক ১৪ শতাংশ)। বিজ্ঞানের অন্যান্য ডিসিপ্লিন যোগ করলে এই হার দাঁড়ায় ৬৫ দশমিক ৮৩ শতাংশে।
তুলনামূলক অবিবাহিতরা কৃতকার্য হচ্ছেন বেশি
বহুল আকাঙ্খিত বিসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্যদের মধ্যে বিবাহিতদের তুলনায় এগিয়ে আছেন অবিবাহিতরা। সবশেষ পাঁচটি বিসিএসের ফলাফলের পরিসংখ্যান থেকে অবিবাহিতদের এগিয়ে থাকার এই তথ্য পাওয়া গেছে। এই পাঁচটি বিসিএসের মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম ছিল বিশেষ বিসিএস এবং ৪০তম, ৪১তম ও ৪৩তম ছিল সাধারণ। সংসদে উপস্থাপিত পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন তথ্য বলছে, সাধারণ বিসিএসগুলোতে যেখানে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত অবিবাহিত, সেখানে বিশেষ বিসিএসে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের প্রায় ৫৬ শতাংশ অবিবাহিত। যদিও বিসিএস পরীক্ষার যোগ্য আবেদনকারীর মধ্যে অবিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক বেশি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে দুটি বিশেষ বিসিএস ৩৯ ও ৪২তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে বিবাহিত ৪৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও ৪৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ দুটি বিসিএসে অবিবাহিত হচ্ছে যথাক্রমে ৫৬ দশমিক ১২ শতাংশ ও ৫৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ৪০তম বিসিএস, ৪১তম ও ৪৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে বিবাহিত ১৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ ও ১১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অপরদিকে এ তিনটি বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্যে অবিবাহিত হচ্ছে যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।