বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে এমন অবস্থা কেন ?

35

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিবছর এ র‌্যাঙ্কিং করা হয়। স¤প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কোয়াককোয়ারেল সাইমন্ডস (কিউএস) বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাঙ্কিং ২০২৩ প্রকাশ করেছে। ৮ জুন বিশ্বসেরা ১ হাজার ৪০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু এতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পায়নি টপ ৫০০ এর মধ্যে। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০ তালিকার মধ্যে রয়েছে। এমনকি পাকিস্তানেরও ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০-তে আছে। কিন্তু পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবকাঠামো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক দুর্বল এবং তাদের দেশের অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিন্তু আমরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক ভালো করে কেন আমাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০-তে নেই। এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনা হওয়া অবশ্য যৌক্তিক। এ বিষয়ে সরকারের ভাবা দরকার, কেন বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০-তে নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার এবং গবেষণা প্রয়োজন।
২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০০-তে, কিন্তু এখন র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য হতাশাজনক। কারণ, শিক্ষায় ভালোভাবে বা গুণগতভাবে উন্নতি না ঘটলে কোনো উন্নয়ন টেকসই করা সম্ভব নয়। উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে শিক্ষায় উন্নয়ন, গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গবেষণার ব্যাপক উন্নতি বা মানসম্মত গবেষণা না হলে শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা কম রাখতে পারে। এই বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন খুব দ্রুত সেরা ৫০০-তে স্থান করে নিতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রত, কেন আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সেরা ৫০০-তে নেই।
তবে এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এ র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬টি সূচকে মোট ১০০ নম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল্যায়ন করে কিউএস। এর মধ্যে একাডেমিক খ্যাতি ৪০, চাকরির বাজারে সুনাম ১০, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ২০, শিক্ষকদের গবেষণা ২০ ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাতে ৫ নম্বর করে ধরা হয়। কিন্তু এ সূচকগুলোতে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত মেনে চলা হয় না। যেমন আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ২০ শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা মানা হয় না বা নেই। মানদন্ড অনুযায়ী শিক্ষকের পদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ছাড় করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আমার কর্মস্থান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজার ৩৪০, শিক্ষক রয়েছেন ২১০ জন। গড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত দাঁড়ায় ৩৯.৭১। অর্থাৎ ৪০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক রয়েছেন। তথ্য নিলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই অবস্থা পাওয়া যাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক বা শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দ্রæত পলিসি করে যাতে বৈদেশিক শিক্ষার্থী ভর্তি ও কিছু বিদেশি ফ্যাকাল্টি মেম্বার নিয়োগ করানো যায়। গবেষণার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া উচিত এবং প্রমোশনের জন্য গবেষণার মান সংযুক্ত করে দেওয়া উচিত।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দ মানে খরচ নয়, বরং বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে। তাহলে শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন সম্ভব। একাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম বাড়াতে হলে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
এখন দেখতে পাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ যোগ্যতায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে কর্তা ব্যক্তিরা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এসব বন্ধ করা সময়ের দাবি। শিক্ষক নিয়োগে কোনো ধরনের ক¤েপ্রামাইজ করা ঠিক হবে না। শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। উপাচার্যদের আরও সতর্ক থাকতে হবে শিক্ষক নিয়োগে এবং স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে।

লেখক : মো. শফিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক