বিলাইছড়িতে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

2

রাঙামাটি প্রতিনিধি

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একাধিক প্রকল্পে কাগজে বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ন্যূনতম কাজও হয়নি অনেক প্রকল্পে। খোদ উপজেলা সদরে একটি ফুটব্রিজ (পায়ে হাঁটার সেতু) একাধিকবার টেন্ডার দেখিয়ে লুট হয়েছে সরকারের বিপুল টাকা। সঠিক তদন্তে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির আসল তথ্য উঠে আসবে বলে দাবি স্থানীয়দের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অনেকে জানান, বিলাইছড়ি উপজেলায় কয়েকটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। সামান্য কাজ করেই বরাদ্দের সম্পূর্ণ বিল উত্তোলণ করে সিংহভাগ অর্থ লুট করা হয়েছে। এসব টাকা গেছে জেলা পরিষদের ওই এলাকার স্থানীয় সদস্য, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার-প্রকৌশলীদের পকেটে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই বর্তমানে তাদের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায় ৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এগুলোর মধ্যে চারটি রাস্তা এবং একটি ফুটব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প ছিল। জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য রেমরিয়ানা পাংখোয়ার প্রস্তাবে প্রকল্পগুলো অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘বিলাইছড়ি ইউনিয়নের ডাউনপাড়া থেকে পাংখোয়া পাড়া পর্যন্ত (তিন কিলোমিটার) রাস্তা নির্মাণ (২০১৬-২০১৯)’ প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তাবায়ন করা হলেও অল্প কাজেই শেষ করা হয় এটি। পরবর্তীতে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে বর্তমানে রাস্তাটি পরিত্যক্ত, যা এলাকার মানুষের কোনো কাজেই আসেনি। ফলে গচ্ছা গেছে সরকারের এ প্রকল্পের অর্থ।
তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকালে তদারককারীর দায়িত্বে থাকা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কান্তি দেওয়ান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ওই প্রকল্পে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ সম্পাদন করা হয়েছিল। প্রকল্পে বরাদ্দের ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩২৮ ঘন মিটার মাটির কাজে ৪৫ লাখ টাকা এবং ৬০০ বর্গমিটার প্যালাসাইডিং কাজে ৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে নতুন করে প্রকল্পটির স¤প্রসারণ না হওয়ায় উন্নয়ন কাজ করা যায়নি। এ ধরনের প্রকল্পে সংস্কার ও উন্নয়ন ধারাবাহিকতা থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে একই উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে পশ্চিম মন্দিরাছড়া থেকে পূর্ব মন্দিরাছড়া পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, লতাপাহাড় শুকরছড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ ও গবছড়ি থেকে সাংড়াছড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ- এ তিনটি প্রকল্প দেখানো হলেও নির্দিষ্ট স্থানে কোনো কাজই করা হয়নি বলে জানা গেছে। অন্য স্থানে কাজ করার কথা বলা হলেও অনেকের দাবি, এ প্রকল্পগুলোর সঠিক তদন্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, আমার ইউনিয়নে ওইসব এলাকায় রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য সঠিক জানি না। তবে অন্য জায়গায় রাস্তা নির্মাণের কথা শুনেছি।
এদিকে বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে বিলাইছড়ি ছাত্রাবাসে যাতায়াতের জন্য একটি ফুটব্রিজ নির্মাণ করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা জেলা পরিষদ। এ প্রকল্পটি প্রথমে নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৯ সালে। এ প্রকল্পে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দে সেতুটি বাস্তবায়ন করা হলেও একাধিকবার টেন্ডার দেখানো হয় বলে জানা যায়। কিন্তু উপযুক্ত কাজ না করে প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এলাকাবাসীর। কাজ সম্পন্ন না করেও সম্পূর্ণ বিল উত্তোলণ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।
এছাড়াও একই স্থানে গত ২০২৩ সালে বিলাইছড়ি উপজেলাধীন বিলাইছড়ি সদরে ছাত্রাবাসে যাওয়ার রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ ও সোলার সড়কবাতি স্থাপন নামে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আগের সামান্য কাজে প্রথম অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ৪০ লাখ টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে আগের জঙ্গল পরিস্কার ও মাটি কাটার কাজ। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করলে রাঙামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়–য়ার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেমলিয়ানা পাংখোয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখার অফিস সহকারী সুমন্ত চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এসব বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, বিলাইছড়ি সদরে ছাত্রাবাসে যাওয়ার রাস্তা ও ব্রিজের সংযোগ ও সোলার সড়কবাতি স্থাপন কাজটি শেষ। এ কাজটি আগেই করা ছিল। আমার জানা মতে, প্রথম অর্থবছরে পাওয়া বরাদ্দের টাকা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে। ওইসব প্রকল্পের বিস্তারিত সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলীরা জানতে পারবেন।