বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের মিছিল, পুলিশের বাধা-আটক

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা ও মামলার প্রতিবাদে গতকাল বুধবার সারা দেশে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের আটকও করা হয়েছে।
ঢাকা : সকালে পুলিশের বাধার পর মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ঢাবির সাদা দলের শিক্ষকরা।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে বুয়েট-ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে হাইকোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শিশু একাডেমির সামনে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীরা। এর প্রতিবাদে দোয়েল চত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করেন। পরে তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন ঢাবির সাদা দলের শিক্ষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। হাইকোর্টের ভেতরে আইনজীবীদের একটি দলও মিছিল করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ বেলা একটার দিকে মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে তারা দোয়েল চত্বরে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পরে সেখান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমাবেশ করেন। বেলা তিনটার দিকে সেখান থেকে তারা চলে যান।
এদিকে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা-জয়দেবপুর আঞ্চলিক সড়কের শিববাড়ী এলাকা অবরোধের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থীদের একাধিক মিছিল এসে মোড়ে জমায়েত হয়। এ সময় আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়রাও গান দিতে থাকেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও অংশ নিয়েছেন। বেলা একটার দিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও গণস্বাক্ষর সংগ্রহের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনসংলগ্ন মহুয়া মঞ্চের সামনে জড়ো হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের ১০-১৫ জন শিক্ষক যোগ দেন। মিছিলটি শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়ক, নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে আদালত এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্দোলন ঘিরে গত কয়েকদিনে সংঘটিত ‘গণহত্যা ও নির্যাতনের’ ঘটনার তদন্তসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। এসব দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার সড়ক আধা ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এসময় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

দিনাজপুর : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দিনাজপুরে ‘মার্চ ফর জাস্টিসে’ অংশ নেওয়া ৯ শিক্ষার্থী ও এক অভিভাবককে আটক করেছে পুলিশ। দিনাজপুর শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকের পর পুলিশ তাদের দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় নিয়ে যায়। দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন জানান, দিনাজপুরের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা সকাল ১১টার দিকে শহরের গোর-ই-শহীদ বড় মাঠে জড়ো হয়। এসময় তাদের কয়েকজনের সঙ্গে অভিভাবকও কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল ও পুলিশ দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পরে শিক্ষার্থীরা মাথায় লাল ফিতা বেঁধে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে জড়ো হয়ে ‘তোমাদের কোটা তুমি নাও, আমাদের ভাইকে ফিরিয়ে দাও’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করে। ঠিক সেসময় ডিবির সদস্যসহ পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে ৯ শিক্ষার্থীকে আটক করে। আটক এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এগিয়ে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে।

খুলনা : পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, অন্তত ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টার দিকে নগরীর রয়েল মোড় এলাকায় শিক্ষার্থীদের জড়ো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশের অতিরিক্ত কড়াকড়ির ফলে শিক্ষার্থীরা রয়েল মোড়ের আশেপাশে ভিড়তে পারেননি। শিক্ষার্থী মনে হলেই পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেখান থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমেস্ট্রি’২০ ব্যাচের তানজীম তালহাসহ অন্তত ১৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বগুড়া : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। মিছিল নিয়ে আদালত চত্বরে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা মিছিল করেন। এরপর তারা আদালত চত্বর থেকে ২০ গজ দূরে রোমেনা আফাজ সড়কে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শহরের জেলখানা মোড় হয়ে আদালত চত্বরের দিকে যাওয়ার সময় তাদের বাধা দেয় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। পরে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করেন।

বরিশাল : বরিশালে শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে দুই দফা লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে চার সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। ১১টার দিকে শহরের দুটি পয়েন্টে, সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে ও জজ কোর্টের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এসময় কমপক্ষে ২০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।

সিলেট : সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।
স্থনীয়রা জানান, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে শাবিপ্রবি শিক্ষকরা ক্যাম্পাসের চেতনা একাত্তরের পাদদেশে সমবেত হন। এরপর সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে শিক্ষকরা সমাবেশ করেন।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১১টা থেকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর আরও শিক্ষার্থী যোগ দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে।
সিলেটে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা পদযাত্রা নিয়ে নগরের সুবিদ বাজারের দিকে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

রাজশাহী : মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করতে শিক্ষার্থীরা আদালতের সামনে সমাবেশ করবেন খবর পেয়ে সকাল থেকেই ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরাও ছিলেন। শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।