বিভিন্নস্থানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৪ মামলা

2

ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও ওমর ফারুক হত্যা মামলা, রংপুরে আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলা, ঢাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মামলা, জয়পুরহাটে শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার হত্যা মামলাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ পুলিশ কর্মকর্তা ও দু’শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গতকাল আরো ৪টি মামলা হয়েছে।
ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও ওমর ফারুক হত্যার অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গতাকল রবিবার ঢাকা বারের সদস্য নাসরিন বেগম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের মামলার আবেদন করলে শুনানি নিয়ে হাকিম তরিকুল ইসলাম অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে সূত্রাপুর থানাকে নির্দেশ দেন।
অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার ও ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
মামলার আবেদনে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ১৯ জুলাই শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। খবর বিডিনিউজ এর।
আসামিদের মদদে পুলিশ ও তখনকার ক্ষমতাসীনরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা এলোপাথারি গুলি করলে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে অনেকেই জখম হয়। হামলাকারীদের গুলিতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও ওমর ফারুক মারা যান।
প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া নবম মামলা এটি। এর আগে গত পাঁচ দিনে আটটি মামলা হয়, যার মধ্যে সাতটি হত্যা মামলা, অন্যটি দায়ের হয়েছে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে।
রংপুরে আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলা :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
ঘটনার এক মাস পর রবিবার দুপুরে রংপুর মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে নিহত আব্দুল্লাহ আল তাহিরের (২৮) বাবা আব্দুর রহমান বাদি হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান পেশকার রাজু মিয়া।- খবর বিডিনিউজের
মামলায় সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি (বাধ্যতামূলক অবসর) আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি (ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, এডিসি (ডিবি) মো. নুর ইসলাম পাটোয়ারী এবং কোতোয়ালি থানার ওসি মোন্তাসির বিল্লাহকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আহব্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহব্বায়ক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের আহব্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহব্বায়ক মাজেদ আলী বাবলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রমানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, সাবেক সদস্য সদস্য (সংরক্ষিত) নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষী চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ সনু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মানিক, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজাহানুর ইসলাম সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তানিম আহসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ আসিফ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী মো. মামুন।
মামলায় বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই রংপুর মহানগর সিটি বাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন পুলিশের গুলিতে আব্দুল্লাহ আল তাহির নিহত হন।
তিনি ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গøাস অ্যান্ড সিরামিকসের অষ্টম পর্বের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দশম মামলা এটি।
গতকাল রবিবার ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও ওমর ফারুক হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ৫ অগাস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে আবুল হাসান স্বজন নিহতের ঘটনায় শনিবার রাতে সদর মডেল থানার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়।
এদিন ভোররাতে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে গুলিতে নিহত কলেজ ছাত্র তানভির ছিদ্দিকীর চাচা মোহাম্মদ পারভেজ চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
এর আগে চার দিনে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়, যার মধ্যে চারটি হত্যা মামলা, অন্যটি দায়ের হয়েছে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে।
এর বাইরে বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষক সেলিম হোসেনের নিহতের ঘটনায় শুক্রবার হত্যা মামলা করা হয়েছে সদর থানায়।
এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই থেকে ৫ অগাস্ট পর্যন্ত হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলা :
বিরোধী দলে থাকাকালীন ২০১৫ সালে কাওরানবাজার এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।-খবর বাংলা ট্রিবিউনের
রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বাদি হয়ে তেজগাঁও থানায় এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৭০০ জনের কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
তেজগাঁও থানায় করা মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন খালেদা জিয়া। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে কাওরানবাজারে বাপেক্স ভবন, পল্লী ভবন, পরিবার পরিকল্পনা অফিস ও কাব্যকস সুপার মার্কেটের সামনের রাস্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশে আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। ওই হামলায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সব গাড়ি ভাঙচুর ও সিএসএফ নিরাপত্তারক্ষীসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে তেজগাঁও থানায় সহযোগিতা চাইলেও তারা নীরব ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক প্রভাবে ঘটনার সময় মামলা করতে না পারায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিলম্বে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এজাহার দায়ের করা হলো।
এজাহারে আদেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ মোট ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। হামলাকারী হিসেবে মামলার এজাহারে ১০১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৭০০ জন দুর্বৃত্ত হামলার ঘটনায় অংশ নেয় বলেও উল্লেখ করা হয়।

জয়পুরহাটে শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার হত্যা মামলা :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জয়পুরহাটের কলেজের শিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশাল (১৮) নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুরে নিহত নজিবুল সরকার বিশালের বাবা মজিদুল সরকার বাদি হয়ে আদালতে মামলাটি করেন।-খবর বাসসের
জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে সদর থানাকে নির্দেশ দেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল মোমেন ফকির বলেন, শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, জয়পুরহাটের দুইজন সাবেক সংসদ সদস্যসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এরআগে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নজিবুল সরকার বিশাল (১৮) নিহত হন। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের মজিদুল সরকারের ছেলে। নজিবুল সরকার পাঁচবিবি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার ১৪ দিন পর গতকাল রবিবার নিহত নজিবুল সরকার বিশালের বাবা বাদি হয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।