বিপদে হালদা পাড়ের মানুষ

16

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী তিন উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলীতে যুক্ত হয়েছে হালদা নদী। হালদার পানি বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হওয়ায় গেল বন্যায় এই তিন উপজেলার আড়াই লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হালদার দুই পাড়ের প্রায় ২০০কিলোমিটার বাঁধের ১৩০ কিলোমিটার অরক্ষিত থাকায় ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। অরক্ষিত অংশে বিপদসীমার ৫ ফুট উপর দিয়ে পাহাড়ি ঢল ও জলোচ্ছ্বাসে পানি প্রবেশ করেছে। আপাতত বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দ্রæত সময়ের মধ্যে অরক্ষিত অংশে বাঁধ নির্মিত না হলে হালদা পাড়ের মানুষের বিপদ আরও বাড়বে। এবারের বন্যার পর হালদা নদী ঘিরে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ফটিকছড়ি উপজেলার গত ১৯-২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনদিনে ক্রমাগত বৃষ্টিতে সৃষ্ট প্রচন্ড পাহাড়ী ঢলে হালদা নদী, ধুরং খাল, সর্তা খাল, তেলপাড়ি খাল সংলগ্ন বাঁধের অনেক স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। যার ফলে শুধু ফটিকছড়ির ১৬টি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সময়ে হালদা নদীতে সর্বোচ্চ পানি ছিল সমতল ১৫.৮৮ মিটার। যা বাঁধের সর্বোচ্চ ডিজাইন ১৫.৬৮ মিটারের চেয়ে ০.২০ মিটার অধিক।
জানা যায়,হালদা নদীর দুই পাড়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০০ কিলোমিটার। হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি অংশে ২০২২ সালে সমাপ্ত প্রকল্পের অধীনে ৪৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। ২০২৩ সালে হাটহাজারী ও রাউজান অংশে সমাপ্ত প্রকল্পে ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। দুই প্রকল্পে ৪০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়। মূলত এই দুই প্রকল্প এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি কমলেও অরক্ষিত অংশে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। বন্যায় শুধুমাত্র হালদা পাড়েই তিন উপজেলার ২১টি অংশে ভাঙন হয়েছে। বন্যায় নাজিরহাট পৌরসভা, ফটিকছড়ি পৌরসভা, ভুজপুর, সুন্দরপুর, সমিতির হাট, নারায়ণহাট, খিলাম, পাইন্দং, বক্তপুরে হালদা নদীর ভাঙন, রাউজান উপজেলা, হাটহাজারীর ফরহাদাবাদে, উত্তর মাদার্শা, গড়দুয়ারায় হালদা নদীর তীর প্রতিরক্ষা কাজের অংশে ওভারটপিং ও টপ ব্লক ধস হয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় ১ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার হালদা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ক্ষয়ক্ষতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, ফটিকছড়ি অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং মদুনাঘাট থেকে সাত্তারহাট ব্রীজ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এরাকায় দিয়ে বেড়িবাঁধের অস্তিত্ব নেই। এই অংশ দিয়ে স্বাভাবিক জোয়ারেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এরপরেও হাটহাজারী এলাকায় বেড়িবাঁধ অনেক ভালো আছে। রাউজান ও ফটিকছড়ির বাঁধের অবস্থা খারাপ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটির বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা পূর্বদেশকে বলেন, ‘দুইটি প্রকল্পে প্রায় ৭০ কিলোমিটার কাজ হয়েছিল। সেসব জায়গা ছাড়া বাকি অংশে পানি প্রবেশ করেছে। বাঁধের অরক্ষিত প্রতিটি অংশেই বিপদসীমার উপর প্রায় ৫-৬ফুট উচ্চতায় পানি প্রবেশ করেছে। রাউজানে বেড়িবাঁধ না থাকায় স্বাভাবিক সময়েও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। হাটহাজারী অংশে বাঁধ কিছুটা ভালো থাকলেও রাউজান ও ফটিকছড়িতে অনেক জায়গায় এখনো অরক্ষিত। ফটিকছড়িতে প্রকল্প চলাকালে নাজিরহাট ব্রীজ এলাকায় সাধারণ মানুষ কাজ করতে দেয়নি। যে কারনে সে অংশে প্রচুর পানি প্রবেশ করেছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘হালদা নদী ঘিরে দুইটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ফটিকছড়িতে হালদার ১১৭ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার কাজ হয়েছে। বাকি এলাকা দিয়ে পানি ঢুকেছে। এরমধ্যে ২৮ কিলোমিটার বাঁধতো একদমই নেই। বন্যায় পুরাতন বøকের ২০-৩০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক জায়গায় প্রকল্পের থাকলেও জমি অধিগ্রহণ ধরা না থাকায় মানুষের বাধায় কাজ করা যায়নি।’
ফটিকছড়ির সমিতির হাট এলাকার বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘বন্যায় হালদা নদী ও লোকালয় পানিতে একাকার হয়ে যায়। কোনটা হালদা নদী কোনটা লোকালয় বুঝা যায়নি। পানির উচ্চতা বেশি থাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের উপর দিয়ে পানি গেছে। এবারের বন্যা বুঝিয়ে দিল হালদা দুই পাড়ের বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর সময় হয়েছে। নয়তো হালদা পাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ হবে না। বেশি বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ি ঢলে ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’