বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধে রেকর্ড

10

বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বেড়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল দুই ক্ষেত্রেই ছাড়িয়েছে অতীতের সব রেকর্ড। মোট ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে এ বাবদ। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এই অর্থ দেশের আলোচিত যোগাযোগ অবকাঠামো পদ্মা সেতু কিংবা মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয়ের চেয়েও অনেক বেশি। এই দুটি বড় অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ও ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রতিবেদন থেকে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধের সর্বশেষ তথ্য জানা গেছে। রোববার ইআরডির ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। মোট ১৩৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে সুদ বাবদ। আগের অর্থবছর ছিল ৯৪ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় সুদ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছর ছিল ৯ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ ৫ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
অন্যদিকে গত বছর বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ১৬ শতাংশ। পরিশোধ করা হয়েছে ২০১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর এটি ছিল ১৭৩ কোটি ডলারের কম। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের আসল বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় আসল পরিশোধের পরিমাণ ২২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছর এ পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আসল পরিশোধ বেড়েছে ৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা।
সুদ এবং আসল মিলে গত অর্থবছরে মোট পরিশোধের পরিমাণ ছিল ৩৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছর যা ছিল ২৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ৬৯ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় গত বছর সুদাসল বাবদ ৩৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আগের অর্থবছর যা ছিল ২৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানেই বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ ১০ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।
এদিকে গত অর্থবছর উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি এবং অর্থছাড় বেড়েছে। ইআরডির প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছর অর্থ ছাড়ের পরিমাণ ছিল ৯৮৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর যা ছিল ৯২১ কোটি ডলার। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে ৬৫ কোটি ডলার বেশি ঋণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে গত অর্থবছর নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ১৯২ কোটি ডলার। ১ হাজার ৭২ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ৮৮০ কোটি ডলার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলা হয়, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর বিদেশি ঋণের আসল বাবদ ২৬২ কোটি ৯০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে। সরকারের এ হিসাবের সঙ্গে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ সংযুক্ত নয়। তবে বাজেটের সংক্ষিপ্তসারে পরিচালন ব্যয় অংশে বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ আগামী অর্থবছরে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কথা বলা আছে। ১১৭ টাকা বিনিময় হার হিসেবে যা ১৭৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে সুদাসল বাবদ নতুন অর্থবছরে মোট ৪৩৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১০২ ডলার বেশি।
জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, বিদেশি ঋণ বাড়লে পরিশোধের চাপ বাড়বেই। এ জন্য এ ধরনের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। ঋণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিচক্ষণতার সঙ্গে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প সাজাতে হবে, যাতে ঋণের অর্থের ব্যবহার লাভজনক হয়, সময় মতো প্রকল্প শেষ হয়। এ ক্ষেত্রে সুশাসনের বিষয়ে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর থাকতে হবে।