বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে ছাত্র-জনতার আন্দোলন

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে, আন্দোলন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার দুপুরে বনানীতে দলের স্থায়ী কমিটির কারাবন্দি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কোটা আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। খবর বাংলানিউজের।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশে একটা গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখছেন যে, এখন শিক্ষার্থীদের কোটা বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন সেই আন্দোলনে সাধারণ সমস্ত মানুষ যোগ দিয়েছে। শুধু ছাত্ররা নয় এখন অভিভাবক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষেরা কিন্তু এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। তারা যুক্ত হয়েছেন সব ভয়কে উপেক্ষা করে। এটাই হচ্ছে, এবারের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দিক যে, মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছেন, যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমি মনে করি যে, এ আন্দোলন তার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। আমি বিশ্বাস করি ইনশাআল্লাহ… জনগণের বিজয় অবশ্যই হবে, ছাত্র-শিক্ষার্থীদের বিজয় অবশ্যই হবে।তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকে আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে, ছাত্ররা যখন আন্দোলন শুরু করেছেন তখনই এর যে যৌক্তিকতা তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা তাদের সঙ্গে সহযোগিতা শুধু নয়, তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা এখনো ওটা শুধু নয়, আরও বেশি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ছাত্রদের এ যৌক্তিক আন্দোলনে আমাদের শুধু সমর্থন নয়, আমাদের সর্ব রকমের সহযোগিতা তাদের প্রতি থাকবে। যেহেতু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এটা। সেজন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব-কর্তব্য সেই দায়িত্ব-কর্তব্য আমরা পালন করছি, আমরা করতে থাকবো। আমাদের সারা দেশের নেতাকর্মীর প্রতি এ আহবান জানাতে চাই যে, ছাত্রদের এ যৌক্তিক আন্দোলনে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা দিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যেটা সব সময় বলে আসছিলাম, তরুণদের জাগ্রত হবার কথা। সেই তরুণরাই এবার জেগে উঠেছে। এজন্যেই আমরা অত্যন্ত আশাবাদী এ কারণে যে, তরুণরা যখন জেগে ওঠে, ছাত্ররা যেখানে জেগে ওঠে, যুবকরা যেখানে জেগে ওঠে সেই আন্দোলনকে পরাজিত করা কারো পক্ষে সম্ভব না। আজকে ভয়াবহ যে দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকার তারা যেভাবে হত্যা করেছে আমাদের সন্তানদের, সেটা অবর্ণনীয়। ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। শত শত ছাত্রদের তারা হত্যা করেছে। আমরা যখন আবার দেখতে পাই যে, তাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে, আমি যেটা দেখলাম পত্রিকায় ৫৯ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এটা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকেও তো ছাড়িয়ে যাচ্ছে, চিন্তাই করা যায় না এটা।
কারাগারে অমানবেতর অবস্থা চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, আমি এখানে এসেছিলাম আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাহেবের বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। এর আগে আমি গিয়েছিলাম নজরুল ইসলাম খান সাহেবের বাসায় তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। তার স্ত্রী অত্যন্ত অসুস্থ আপনারা জানেন সবই। মূলত আসার কারণটা হচ্ছে, আমরা যে তথ্য পাচ্ছি, কারাগারে তাদের, শুধু তাদের নয় সব রাজনৈতিক বন্দিদের যাদেরকে এক মাসের মধ্যে বন্দি করেছে অমানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। তাদের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই, তারা কোনো কিছু পাঠাতে পারছেন না, যোগাযোগই করতে পারছেন না..এটাকে আপনার টোটালি আইসোলেটেড বলা যায় আর কি। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য না, এটা জেল কোডের বাইরেও বটে। তারা (বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য) অসুস্থ মানুষ, বয়স্ক মানুষ, নজরুল ইসলাম খান ভাই ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভাই অসুস্থ মানুষ, বড় বড় অসুখ আছে। তাদের ঠিকমতো ওষুধপত্র পাঠাতে পাচ্ছেন না। এমনকি ইনসুলিন সেটাও সঠিকভাবে পাঠাতে পারছেন না। আমি আপনাদের মাধ্যমে জেল কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, এ অমানবিক কাজগুলো এ মুহূর্তে করবেন না, আপনারা অতীতে অনেক করেছেন এখন দয়া করে এ অমানবিক কাজগুলো করবেন না।
সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব প্রথমে যান বনানী ডিওএইচএসে দলের কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের বাসায় তার অসুস্থ স্ত্রী কান্তা ইসলামকে দেখতে যান। এ সময়ে তার ছেলে অনিক খান, স্ত্রী রাবেয়া আক্তার রাখি খান ছিলেন।
পরে বনানীতে কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর স্ত্রী তাহেরা খসরুর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময়ে তার ছেলে ইসরাফিল খসরু ছিলেন। মহাসচিব তাদের খোঁজখবর নেন।