বাস মালিকদের সুবিধা দিতে ভাড়া বৃদ্ধি রেলের

1

ট্রেনে একশ কিলোমিটারের বেশি যাত্রায় রেয়াতি প্রত্যাহার করায় ভাড়া যে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে বাস মালিকদের যোগসাজশ দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, রেল কর্তৃপক্ষ রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের নামে ভাড়া বৃদ্ধি করে দূরপাল্লার যাত্রাপথে রেলের ভাড়া বাসের ভাড়ার চেয়ে বেশি নির্ধারণ করে বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
রেলের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, এটা আমাদের সংগঠনের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁন হলে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন মোজাম্মেল। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, রেলের এই ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের ওপরে একটা চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। সেজন্য আমরা রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্ত বাতিল চাই। রেল গণমানুষের বাহন, আমরা রেলের সাশ্রয়ী ভাড়া চাই।
১৯৯২ সাল থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ বাতিল করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত চালু ছিল। আগামী ৪ মে থেকে দূরত্বভিত্তিক রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রেয়াতি ব্যবস্থায় ১০১ থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরত্বের ভ্রমণে ভাড়ার ওপর ছাড়ের হার ২০ শতাংশ। আর ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের জন্য রেয়াতের হার ২৫ শতাংশ এবং ৪০১ কিলোমিটারের উপর ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়।
এ সুবিধা প্রত্যাহারের পর ট্রেন ভাড়া বাসের চেয়ে বেশি হচ্ছে মন্তব্য করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম তূর্ণা নিশিতা ট্রেনে শোভন চেয়ার আগে ভাড়া ছিল ৩৫৪ টাকা। এখন রেয়াতি সুবিধা তুলে নেয়ার পর ভাড়া হয়েছে ৪০৫ টাকা। এই টিকেটে কালোবাজারির কাছে যাত্রীদের কিনতে হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে লোকাল বাসের ভাড়া ৪০০ টাকা, ডাইরেক্ট বাসের ভাড়া ৬৮০ টাকা। এভাবে দেখা যায় যে, সব রুটে রেলের ভাড়া বাসের ভাড়ার চেয়ে বেশি।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, রেলখাতকে লাভজনক করার ঘোষণা দিয়ে ২০১২ সালে সর্বনিম্ন ৭ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৭ শতাংশ রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল।
একইসাথে ২০১২ সালের ভাড়া বৃদ্ধির সময় ট্রেনের ওই সময়ে বিদ্যমান সেকশনাল রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের পরেও রেল লাভবান হয়নি, উল্টো ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রেলের লোকসান ছিল ১২২৬ কোটি টাকা।
ভাড়া না বাড়িয়ে রেলের অনিয়ম-দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বন্ধ করে, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করে বাণিজ্যিভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি নানামুখী লাভজনক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে রেলকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব। এজন্য রেল মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে নিবেদিত চৌকস, ব্যাপক দেশি-বিদেশি কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ এক ঝাঁক দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন ও যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রুবেল উপস্থিত ছিলেন।