বানভাসির কষ্ট পুঁজি করে পকেট কাটা বন্ধ করুন

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

বন্যা উপদ্রুত এলাকায় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত নৌকার ভাড়া, গণপরিবহন ও ট্রাক ভাড়া, মোমবাতি, শুকনো খাবার, খাবার পানি, সবজিসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি।
বানভাসী মানুষের কষ্টকে পুঁজি করে ব্যবসা করার পরিবর্তে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও সেবায় জনগণের পকেট কাটার উৎসব বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন সংগঠনটি। সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় ত্রাণ বিতরণের চেয়ে মানুষের পাশে থাকার আহŸানও জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম-ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যার কারণে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রæপ চট্টগ্রাম বিভাগ সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ ও ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ উপরোক্ত দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, উজান থেকে আসা পানিতে ফেনী, নেয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের প্রায় ১১টি জেলায় বন্যায় ৪৫ লক্ষের অধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে অসহায় অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখিন। অনেকের প্রাণহানীও ঘটেছে। বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দী এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি, শুকনো খাবার এবং আশ্রয়ের অভাবে মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় মানুষ অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার, হাসপাতাল বন্ধ, রেল, মহাসড়কসহ সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ, গ্যাস, মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অবিরাম বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পুরো নগরী তলিয়ে গেছে।
বিবৃতিতে নেতৃব্ন্দৃ বলেন, ব্যবসায়ীরা সমাজের এমন একটি বিচিত্র প্রাণী যারা বিগত ১৫ বছর সরকারের ছত্রছায়ায় শুধু মুনাফা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তার অবকাশ পায়নি। যার কারণে বিগত সরকারের প্রতি অতিকৃতজ্ঞ সুবিধাভোগী চক্রটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমনে আওয়ামী লীগ সরকারকে আজীবন সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। এক শ্রেণির অসাধু গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মানুষের যেকোন সংকটকে পুঁজি করে জনগণের পকেট কেটে কোটিপতি হওয়ার বাসনায় উন্মাদ বনে যান। তখন মানবতা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়। সেকারণে ‘দুর্যোগ মহামারি কারো জন্য পৌষ মাস, আবার কারো জন্য সর্বনাশ’। এই ব্যবসায়ী চক্রটি দেশে করোনা মহামারি চলাকালীন জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা ও অগ্নিমূল্য, ক্লিনিকে চিকিৎসায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অক্সিজেন সিলিন্ডারের অগ্নিমূল্য আদায়ের বিষয়টি জাতি এখনও ভূলতে পারেনি। এখন পানিবন্দী মানুষকে শুকনো খাবার, নিত্য খাদ্যপণ্য, সবজি, নৌকা, বাস, ট্রাক এমনকি বিমান ভাড়ায়ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে অর্থ লিপ্সু ও মূল্য সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে।
তারা বলেন, ব্যবসায় মুনাফা হবে, কিন্তু সংকট হলেই বিমানের টিকেটের মতো দ্বিগুন দাম বৃদ্ধি এটা কি ব্যবসা? নাকি সিন্ডিকেট এটা ফায়সালা জরুরি। যে কোন পূজা, পার্বন, ঈদ উৎসবে আমাদের ব্যবসায়ীরা যেভাবে অতিমুনাফায় একযোগে সোচ্চার হন তা কতটুকু নৈতিক ও যুক্তিসঙ্গত? তাই সাধারণ ভোক্তাদেরকে সংকটকালীন সময়ে জিম্মি করে অতিমুনাফা করে সংকটাপন্ন ও বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে মানবিকতা দেখানোর পরিবর্তে ব্যবসায়িক নীতি ও নৈতিকতা মেনে ব্যবসা করার জন্য দেশের ব্যবসায়ী সমাজ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, করপোরেট হাউসসহ দেশের বিত্তবানদের বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানায় ক্যাব।