বাড়ির ছাদে বস্তায় আদা চাষে সাফল্য

9

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

প্রতিদিনের রান্নায় আদা ব্যবহার করেন অনেকেই। আদা খাবারকে সুস্বাদু করে তোলে। এছাড়া আদা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বাজার থেকে না কিনে আপনি চাইলে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় বা ছাদে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। যা আপনাকে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান করবে।
রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের হাজানিখীল গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন। তার বাড়ির ছাদ সবুজে চেয়ে গেছে। থরে থরে সাজানো বস্তায় বেড়ে উঠছে আদা গাছ। ইউটিউবে দেখে এমন ব্যতিক্রমী আদা চাষ করেছেন তিনি। নিজ বাড়ির ছাদ ও উঠানে তিনি ১ হাজার বস্তায় আদা চারা লাগিয়েছেন। জুন মাসের শুরুতে ইউটিউব থেকে দেখে আদা চাষ শুরু করেন। মাত্র ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ডিসেম্বরে আদা তুলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার বাড়ির ছাদে আমি বস্তায় মাটি ভর্তি করে আদা চাষ শুরু করি। বাড়ির ছাদ ছাড়াও বাড়ির সামনে উঠানে আদা চাষ করি। মাটির সাথে গোবর মিশিয়ে বস্তায় আদার চারা রোপণ করি। অনেকটা সৌখিনভাবে আদা চাষ করি। সামনে আরও ব্যাপকভাবে আদা চাষ করার ইচ্ছে আছে। বস্তায় আদা চাষ করতে আমার ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বস্তায় আড়াই কেজির মত আদা পাওয়া যাবে। আশা করছি, ১ হাজার বস্তায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ আদা পাবো। বাজারে আদার দাম আছে। সে হিসেবে ৩ থেকে সাদে ৩ লাখ টাকার আদা বিক্রি করতে পারবো। আমি, আমার বাবা নবী হোসেন ও ভাই জালাল উদ্দিন মিলে আদা পরিচর্যা করি। আমার আদা চাষ ও কম পুঁজিতে অধিক লাভ দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক আদা চাষ করার প্রস্তুুতি নিচ্ছেন।
কীভাবে চাষ করবেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে একটি বস্তায় ৩ ঝুড়ি মাটি, ১ ঝুড়ি বালি, ১ ঝুড়ি গোবর সার ও দানাদার কীটনাশক ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম নিতে হবে। মাটির সঙ্গে গোবর, বালি ও ফুরাডান ভালোভাবে মিশ্রন সিনথেটিক বস্তায় ভরে নিতে হবে। সম্ভব হলে ১ চা চামচ পটাশ সার মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
এরপর একটি বালিভর্তি টবে ৩ টুকরো অঙ্কুরিত আদা পুঁতে দিতে হবে। আদার কন্দ লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক অটোস্টিন ২ গ্রাম বা লিটার পানিতে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। অন্য ছত্রাকনাশকও ব্যবহার করা যাবে। যা হোক, শোধনের পর কন্দগুলো আধাঘণ্টা ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, ২০ থেকে ২৫ দিন পর বপনকৃত আদা থেকে গাছ বের হবে। তখন আদার চারা সাবধানে তুলে বস্তার মুখে ৩ জায়গায় বসিয়ে দিতে হবে। দিনের বেশিরভাগ সময় রোদ পায়, এমন স্থানে বস্তাটি রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আদা গাছ বড় হতে থাকবে। চারা লাগানোর দু’মাস পরে ৪ চা চামচ সরিষার খোল ও আধা চামচ ইউরিয়া মাটিতে প্রয়োগা করতে হবে। বস্তার মাটি মাঝে মাঝে খুঁড়ে একটু আলগা করে দিতে হবে। জুন-জুলাই মাসে আদা লাগালে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তোলা যায়। এছাড়া অন্য সময়ও আদা চাষ করতে পারেন। এ পদ্ধতিতে একেকটি বস্তায় তিনটি গাছ থেকে এক-দেড় কেজি পর্যন্ত আদা পাওয়া যায়।
সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, হেলাল একজন আলোকিত যুবক। সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কৃষি নির্ভর কাজ করে। মৌসুমে মৌসুমে নানা কৃষি ফলনের চাষ করে। এর আগে রঙ্গীন ফুল কফি, নানা জাতের মসাল্লা ও সৃজনশীল কাজ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দেয়। তাকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উৎসাহ পাচ্ছেন।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, আমি হেলালের আদা চাষ দেখতে সরেজমিন যাই। আমার খুব ভালো লেগেছে। এভাবে আত্মকর্মসংস্থানে বেকার যুবকদের হেলালের মতো কিছু না কিছু করে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যেতে হবে। আদা চায়ে যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরুল কায়েস জানান, যে কেউ বস্তায় করে আদা চাষ করতে পারেন। কিছুটা কষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। বস্তায় আদা চাষ করতে হলে মাটি ও সার ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে। ফাঙ্গাস ও ভ্যাকটেরিয়ার আক্রমণ যাতে করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। অনাবাদি জমিতেও বস্তায় আদা চাষ করা যায়। আদা চাষে কম পুঁজি লাগে। ফলন ভালো হলে আদা চাষে ব্যয়ের ৪/৫ গুন বেশি টাকা আয় করা সম্ভব।