বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচরে উৎসবমুখর প্রার্থী ও ভোটাররা

3

রাঙামাটি প্রতিনিধি

৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মে। এরপরই রাঙামাটি জেলায় শেষ হচ্ছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২টি সিট এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিও পেয়েছে ২টি সিট। রাঙামাটি সদর ও বরকল উপজেলায় জয়ী হয়েছে জেএসএস। কাউখালী এবং জুরাছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতেছে ২টিতে ও জেএসএস ১টিতে। অর্থাৎ কাপ্তাইয়ে আওয়ামী লীগ, রাজস্থলীতে আওয়ামী লীগ এবং বিলাইছড়িতে জেএসএস বিজয়ী হয়েছেন।
এবার আওয়ামী লীগ থেকে কাউকে দলীয় মনোনয়ন বা নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়নি। যার কারণে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা ছিল বেশি। তবে কিছু কিছু জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপজেলা নির্বাচনে পক্ষ নিয়েছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে গিয়ে সরাসরি প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। সরকার দলের প্রধান শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি বলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি এবং জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা উপজেলা নির্বাচনে কারও পক্ষ নিতে পারবে না। কিন্তু এই নির্দেশের প্রতিফলন দেখা যায়নি অনেক জায়গায়।
লংগদু উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। চায়ের দোকান হতে শুরু করে হাট-বাজার ও মাঠে-ঘাটে নির্বাচনী আলাপ আলোচনা। ভোটাররা কেউ বলছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশকে ভোট দেবে। আবার কেউ কেউ বলছে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক সরকারকে ভোট দেব। তবে লংগদু উপজেলার সাধারণ ভোটারদের জরিপে দেখা গেছে, আব্দুল বারেক সরকার ভোট যুদ্ধে এগিয়ে আছে। আবার স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বলছে বাবুল দাশও ভোটের মাঠ কাঁপিয়ে তুলছেন। আবার ৩ প্রার্থীর মধ্যে কালাপাকুর্জ্যা মৌজার হেডম্যান, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মীর সিরাজুল ইসলাম ঝন্টুও চেয়ারম্যান পদে ভোটের মাঠে যথেষ্ট আলোচনায় আছেন। তবে ভোটারদের ধারণা অল্প ভোটের ব্যবধানে বারেক সরকার ও বাবুল দাশ বাবুর মধ্যে লড়াই হবে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী বারেক সরকার মুঠোফোনে বলেন, আমার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল দাশ বাবু যদি পেশি শক্তি এবং প্রশাসনকে ব্যবহার না করে তাহলে আমি বিপুল ভোটে জয়যুক্ত হব। এখন থেকে বাবু আমার বিরুদ্ধে যে ভাবে লেগেছে তাতে আমি ও আমার ভোটারা আশংকা প্রকাশ করছি। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছি আমি শতভাগ জিতবই। জনগণ আমাকে ভালবেসে ভোট দেবে। আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। জনগণ বিগত দিনে আমার পাশে ছিল, বর্তমানেও আমার পাশে আছে। হুমকি ধমকি দিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া যায়না। আর টাকা ও ধন সম্পদ ছিটিয়েও জনগণের মন কেড়ে নেওয়া যায়না।
প্রার্থী বাবুল দাশ বাবু বলেন,আমি ছাত্র রাজনীতি করে আজ হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে আজ এতটুকুতে আসতে পেরেছি জনগণের ভালবাসা ও দোয়া নিয়ে। বাবুল দাশ বাবু লংগদুবাসীকে অনেক ভালবাসেন। সকল বিপদ আপদ ও এলাকার উন্নয়নে আমি বাবুল দাশ বাবুর ভূমিকা সবাই জানে। জনগণের বিপদ আপদে সর্বদা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হলে মানুষের বিপদ আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ব। উপজেলার উন্নয়ন করা হবে। প্রতিটি নাগরিক তাদের নিজ নিজ নাগরিক সুবিধা পাবে।লংগদু ও বাঘাইছড়ি ভোটারা বলছে, নির্বাচন আগামী ২৯ মে এখন থেকে যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছে জানিনা আমরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি কি না। যদিও নৌকা প্রতীক নাই তারপরও পক্ষ বিপক্ষ চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। লংগদুতে ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি,বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার। দু’জনেই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
বিশেষ করে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উপজেলা নির্বাচন তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে জেলার বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলা নির্বাচন ঘিরে নানান গুঞ্জন- প্রভাবশালীদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলার আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাসায় গিয়ে দেখা করে এসেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
লংগদু ও বাঘাইছড়ি এই দুই উপজেলায় বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। ওইসব কেন্দ্রে অনিয়ম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রার্থী এবং ভোটারা আশংকা করছেন।
যদিও এই নির্বাচনে দলীয় হাই কমান্ড বা জেলা থেকে কোন প্রার্থীর ব্যাপারে র্নিদিষ্ট ইঙ্গিত বা সরাসরি বলে দেওয়া হয়নি যে, কাউকে সমর্থন করতে। এরপরও লংগদু উপজেলাধীন বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল বশর প্রকাশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঠে তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেন এবং প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। ভোটারা বলছেন এব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন নীরব।
লংগদু ও বাঘাইছড়ি ভোটারা বলছেন, নির্বাচন আগামী ২৯ মে এখন থেকে যে পরিস্থিতি শুরু হয়েছে জানিনা আমরা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি কি না। যদিও নৌকা প্রতীক নাই তারপরও পক্ষ বিপক্ষ চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। লংগদুতে ৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল বারেক সরকার।
অপরদিকে বাঘাইছড়িতে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং জেএসএস সংস্কার নেতা সুদর্শন চাকমা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অলিভ চাকমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটারা বলছেন দু’জনের অবস্থানই ভাল। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভাগ্য নির্ধারণ করবে আগামী ২৯ মে। দু’জনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মোশারফ হোসেন খান ও পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বিপিএম বার বলেন, সুষ্ঠু,অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
এই নির্বাচনে কোন কেন্দ্রে জাল ভোট , কেন্দ্র দখল এবং ন্যূনতম কোন ধরনের ঝামেলা হলে সাথে সাথে ওই কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে কাউকে চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবেনা। নির্বাচনে অসংখ্য পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ভিডিপি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে প্রত্যেকটি কেন্দ্র।