বাংলাদেশে বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু : ইউনিসেফ

3

দেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় গ্রামকে গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ৫৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে ২০ লাখের বেশি শিশু ‘ঝুঁকিতে’ আছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল- ইউনিসেফ। গত ৩৪ বছরের মধ্যে এবারের বন্যাকে পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা বলে মনে করছেন ইউনিসেফ। বন্যা কবলিত শিশুদের জরুরি সহায়তার জন্য আরো তহবিল প্রয়োজন বলে মনে করছে সংস্থাটি। খবর বিডিনিউজের
শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ বলেছে, লাখ লাখ শিশু ও তাদের পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, তাদের কাছে নেই কোনো খাবার বা জরুরি কোনো ত্রাণ সামগ্রী। সরকারি লোকজন ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কারণে আগামী দিনে আরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্যে জানা গেছে, ১১ জেলায় চলমান বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে; এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৪ লাখের বেশি মানুষ।
ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ এমা ব্রিগহাম বলেন, এই বন্যায় অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। এছাড়া ঘরবাড়ি ও স্কুল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা অসহায় অবস্থায় রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইউনিসেফ।
এমা ব্রিগহাম জানিয়েছেন, বন্যা শুরুর পরেই দুর্গতদের জন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাওয়ার স্যালাইনসহ জরুরি ত্রাণসামগ্রী ইউনিসেফ সরবরাহ করে আসছে। কিন্তু বন্যা কবলিত প্রতিটি শিশুর কাছে পৌঁছাতে এবং শিশুদের ভবিষ্যতের ওপর চলমান এই সংকটের বিধ্বংসী প্রভাব রোধ করতে আরও তহবিলের প্রয়োজন, বলেন ব্রিগহাম। তিনি বলেছেন, বন্যা শুরুর পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হাসান আরিফের সাথে সমন্বয় করে ইউনিসেফ প্রাথমিক যাচাই পর্ব চালিয়েছে।
ব্রিগহাম বলেছেন, অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে ইউনিসেফ এ পর্যন্ত এক লাখ ৩০ হাজার শিশুসহ তিন লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে। এসব মানুষের মধ্যে তারা জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন উপকরণ, যেমন ৩৬ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, পানি ধরে রাখার জন্য ২৫ হাজার জেরিক্যান এবং দুই লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট বিতরণ করেছে। কিন্তু এসবের বাইরেও আরো অনেক কিছু করা প্রয়োজন বলে তাগিদ অনুভব করছেন ব্রিগহাম।
তিনি বলেন, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং শিশুদের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা, নিরাপদ পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি উপকরণ (হাইজিন কিট), জরুরি ল্যাট্রিন তৈরি, স্যানিটারি প্যাড, এবং জরুরি জীবনরক্ষাকারী ওষুধের প্রয়োজন।
এছাড়া অসুস্থ নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং গর্ভবতী মায়েরা যেন নিরাপদে তাদের সন্তান জন্ম দিতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় সেবা কার্যক্রম অবিলম্বে চালুর তাগিদ দিয়েছেন ব্রিগহাম।
ইউনিসেফ বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যা, দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা এবং মে মাসের ঘূর্ণিঝড় রেমালের মতো দুর্যোগগুলো খুব কাছাকাছি সময়ে হয়েছে। তিনটি জরুরি পরিস্থিতির কারণে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ শিশুসহ পুরো বাংলাদেশে এক কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিনটি জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য তাৎক্ষণিক সাড়াপ্রদান কর্মসূচির অংশ হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত শিশু, গর্ভবতী নারী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য জরুরি, জীবনরক্ষাকারী এবং মাল্টি-সেক্টরাল কার্যক্রম পরিচালনায় ইউনিসেফের ৩৫.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
ইউনিসেফ মনে করছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাপ্রবাহের সংখ্যা, তীব্রতা এবং অনিশ্চয়তা বেড়ে গেছে, যা বাংলাদেশকেও ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এ কারণে জলবায়ু সংকটকে মৌলিকভাবে একটি শিশু অধিকার সংকট হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি ইনডেক্স (চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স) অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ও পরিবেশগত ঝুঁকির শিকার।
ব্রিগহাম বলেন, বছরের পর বছর বন্যা, তাপপ্রবাহ ও ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশের লাখ লাখ শিশুর জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিশ্চিতভাবেই শিশুদের জীবন পরিবর্তন করছে। আরো দেরি হওয়ার আগেই শিশুদের জন্য বিশ্বনেতাদের জরুরিভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন ব্রিগহাম। তিনি বলেন, এ জন্য বিশ্বনেতাদের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রশমিত করার জন্য দুঢ় পদক্ষেপ নিতে আমরা আহ্বান জানাই।