বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে চীন

8

বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকায় সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে চীন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের পরে ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে এটি বলা হয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
বিবৃতির ছয় নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা, কৌশলগত যোগাযোগ বাড়ানো, সফরের মাধ্যমে উভয়পক্ষের কৌশলগত বিশ্বাস বাড়ানো, চিঠি বিনিময় এবং বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় বৈঠকের কথা। কর্মকর্তা ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগের মাধ্যমে সহযোগিতা ও বিনিময় বৃদ্ধির বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার পাশাপাশি ওই প্যারাটিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা, বিশেষ করে সরকারি দলের সঙ্গে দুইপক্ষের জন্য প্রয়োজনীয় দিক নিয়ে আলোচনার বিষয়ে উভয়পক্ষ তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।’
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি মাত্র দল রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে রয়েছে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। ফলে বাংলাদেশের সব দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি, এই বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন নিয়ে নিয়েছে চীন।’ তিনি বলেন, বিবৃতিতে ‘সরকারি দল’ (গভর্নিং পার্টি) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যে দল ক্ষমতায় থাকবে, সে-ই সরকারি দল এবং এটি শুধু আওয়ামী লীগের জন্য প্রযোজ্য নয়।
সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের একটি আন্তর্জাতিক বিবেচনা আছে। চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং এক নম্বর বৈশ্বিক শক্তি হওয়ার একটি আকাক্সক্ষা দেশটির আছে। সেই প্রেক্ষাপটে যেকোনও দেশের সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বেইজিং যোগাযোগ রক্ষা করবে, এটি স্বাভাবিক বলে তিনি জানান।
অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার কারণে চীন সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাইছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। যৌথ বিবৃতির ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের একটি প্যারায় বলা হয়েছে, সেন্টার ফর চায়না স্টাডিজের পূর্ণ ভূমিকা পালনে উভয়পক্ষ সমর্থন দেবে। ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ ও চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিষয়ে দুই দেশ সমর্থন দেবে। চীনা ও বাংলা ভাষায় বিভিন্ন কোর্স চালু করার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করার কথাও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘চীনের আগ্রহ এবং আকাক্সক্ষা থেকে বোঝা যায় তারা তাদের সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে যদি চীনে ‘বাংলাদেশ সেন্টার’ বা ‘অতীশ দীপঙ্কর সেন্টার’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তাব করে, তবে কিছুটা ভারসাম্য থাকে।’
বিবৃতির ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে নদীর পানি প্রবাহের পূর্বাভাসে সহযোগিতা, নদী ড্রেজিং ও সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায় দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদী ব্রহ্মপুত্র এবং এর উৎস হচ্ছে চীন। নদীটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। বেইজিং যদি তাদের দিকের তথ্য সরবরাহ করে, তবে ভারতের সঙ্গে ওই নদী নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশের সুবিধা হবে।’
নদী ড্রেজিং ও সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায় দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, তিস্তা নদী নিয়ে চীনের আগ্রহ ছিল। কিন্তু ভারতের আগ্রহের কারণে সেটি পিছিয়ে যায়। এখন অন্য নদীগুলো নিয়ে বাংলাদেশ ও চীন কাজ করতে পারে।
কৃষি খাতে চীন অনেক উন্নত এবং তাদের প্রযুক্তি অত্যন্ত ভালো। বাংলাদেশ-চীন যৌথ কৃষি কমিটি, হাইব্রিড ধান ও গম বীজ বপন ব্যবস্থাপনা ও কৃষিযন্ত্র খাতে সহযোগিতার বিষয়টি বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষি খাতে চীনের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’