বর্ষা মৌসুম : নাগরিক জীবন যাপনে সতর্কতা জরুরি

2

রতন কুমার তুরী

অতিবৃষ্টি, বন্যা, তুফান,আর বজ্রপাতে মেঘের গর্জন নিয়ে আসছে বর্ষা মৌসুম। এ মৌসুমটিতে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া প্রায় জায়গায় বন্যা হতে দেখা যায়। ফলে বিশেষ করে দেশের নিম্নাঞ্চলের মানুষদের অবর্ণীয় দুর্ভোগ ভোগ করে বর্ষা মৌসুম কাটাতে হয়। কিছুটা সাবধানতা আর কৌশলী হলে এ দুর্ভোগ থেকে ক্ষাণিকটা রেহাই পাওয়া যায়। যেসব অঞ্চল বর্ষা আসলেই বৃষ্টির কারণে সচরাচর ডুবে যায় তাদের এ বিষয়ে আগেভাগেই পরিকল্পনা নিয়ে রাখা উচিত। বিশেষ করে অস্থাবর সম্পত্তিগুলো সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে। এসময় সবসময় শুষ্ক খাবার ঘরে মজুদ রাখা খুবই জরুরি। গরু বাচুর, ছাগল, হাঁস, মুরগি, স্বর্ণ চাদি, টাকা পয়সা এ ধরনের জিনিষগুলো নিরাপদ জায়গায় রাখার জন্য আগেভাগেই চিন্তাভাবনা করে রাখতে হবে, তানাহলে এগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলে জীবন যাপন আরো কঠিন হয়ে পরবে।এর বাইরে সাইক্লোন কিংবা নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসন কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মত নিরাপদ জায়গায় চলে গেলে প্রাণহানি থেকে বাঁচা সম্ভব। অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করি ঝড়,সাইক্লোনের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষ বারবার মাইকিং করার পরও উপদ্রুত এলাকার মানুষজনকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যেতে পারেনা।
এরা বাড়ি এবং বাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্রের মায়ার টানে বিপদ হবে যেনেও বাড়িতেই অবস্থান করে যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এমন জীবনের ঝুঁকি না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এ বিষয়ে সবাইকে ব্যাপকভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বিপদ সংকেত দেয়ার সাথে সাথে উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে অবশ্যই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে এতে তাদের জীবন রক্ষা পাবে। অনেক সময় দেখা যায় মানুষ পাহাড়ের বিপদজনক জায়গায় বসবাস করছে বর্ষার সময় বৃষ্টি হলেই সে পাহাড় ধসে পড়ে এমনকী প্রাণেরও ক্ষতি হয়। এসব জায়গা থেকে বর্ষা আসার আগেই সরে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এমন ঝুঁকিপূর্ন জায়গায় বসবাস না করাই ভালো বরং আরেকটু কষ্ট করে অন্যত্রে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করা উচিত। তানাহলে প্রতিবছরই এবসত আপনাকে কষ্ট দেবে। বর্ষার সময় আরেকটা বিষয় যেটা আমরা ইদানিং বেশি দেখতে পাই তাহলো বজ্রপাত। এ বজ্রপাতের কারণে বর্ষার সময় অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এক সময় এদেশে তেমন একটা বজ্রপাত হতোনা, হলেও কোনো মানুষের মৃত্যু হতো কদাচিত। বর্তমানে দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল টাওয়ার এবং দেশজুড়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিবাইস থাকায় বজ্রপাত বেশি হচ্ছে। তাছাড়া বৃটিশ আমলে মানুষজনকে বজ্রপাত থেকে বাঁচাতে সীমান্ত বরাবর অনেকগুলো বজ্রপাত নিরোধক ম্যাগনেটিক পিলার বসিয়েছিল, বৃটিশরা চলে যাওয়ার পর এসব অধিক দামি পিলারগুলো চোরাকারবারিরা তুলে নিয়ে বিক্রি করে ফেলায় বজ্রপাত আটকানোর মত আর কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন বর্ষার সময় দেশজুড়ে বজ্রপাত লেগেই থাকে। বর্ষার এ বজ্রপাত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ঘর থেকে বের হওয়ার পর বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পাওয়ার সাথে সাথে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে হবে। বজ্রপাতের সময় কোনো অবস্থাতেই খোলা জায়গায় কিংবা মাঠে অবস্থান করা যাবেনা।
বর্ষার সময় উত্তরাঞ্চলের অনেক কৃষক মাঠে কাজ করতে যায় আর এসময় খোলা মাঠে বজ্রপাতের ফলের তাদের অনেকেরই জীবনহানি ঘটে। এসময় খোলা মাঠে কোনো কৃষকেরই কাজ করা উচিত নয়। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই মাঠে তাদের প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে ফেলা উচিত তাহলেই তারা আর বজ্রপাতের শিকার হবেননা। নিতান্তই মাঠে কাজ করতে হলে অতিবর্ষন এবং মেঘের অতিগর্জনে মাঠে না গিয়ে মেঘের অবস্থা বুঝেই মাঠে যাওয়া উচিত। মুলত আমাদের উজানে ভারত আর ভারত বর্ষার সময় তিস্তা নদীর পানি ছেড়ে দেয়ার ফলে বাংলাদেশের সিলেট জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আরো বেশকিছু জেলা বর্ষাজুড়ে পানি নিচে তলিয়ে থাকে ফলে এসব জেলার মানুষের দুঃখের শেষ থাকেনা।এ বিষয়ে ভারতের সাথে একাধিকবার কথা হলেও তিস্তা চুক্তির বিষয়টা এখনও আটকে আছে। অদূর ভবিষ্যতে এর একটি সুন্দর সমাধানের অপেক্ষায় আছে তিস্তা পাড়ের জনগোষ্ঠী। এর বাইরে রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিশেষ করে শহর এলাকায় কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দালান তৈরী। নালা নর্দমার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা না রাখা এবং বর্ষার সময় নালা নর্দমা দিয়ে পানি অপসারণ না হওয়া ইত্যাদি কারণে বর্ষা আসলেই মানুষজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক সময় শহর এবং গ্রামে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের বছরের পর বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করার কারণেও বর্ষার সময় মানুষজনকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ বিষয়গুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষ একটু করিৎকর্মা হলেই মিটে যায়। আমরা প্রত্যাশা করবো এ বর্ষা মৌসুমে নাগরিক জীবন যাপনকে সহজ করার জন্য কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। জনসাধারণ এ বিষয়ে সজাগ থেকে কর্তৃপক্ষকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই জানি আমাদের প্রতিবছর বর্ষা আসে বন্যা হয় বিশেষ করে নি¤œাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়। অসংখ্য মানুষ কষ্টে দিন যাপন করে। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই সবাইকে সর্তকতা অবলম্বন করেই বর্ষা মৌসুম কাটাতে হবে। কিছুটা সাবধানতা এবং সর্তকতা বর্ষা মৌসুমে নাগরিক জীবনকে কিছুটা হলেও সহজ করতে পারে। তাই আসুন বর্ষা এ বর্ষা মৌসুম আমরা সবাই সতর্ক হই, বিভিন্ন দুর্ভোগ জীবনহানি থেকে বাঁচি।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক