বরমাতে এক গাছের ৫ শাখায় পাঁচ রকমের আম

2

চন্দনাইশ প্রতিনিধি

চন্দনাইশ উপজেলার বরমা কেশুয়া এলাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. আলী আজাদীর ভাতিজা আবু তৈয়বের শখের বাগানে এক গাছের ৫ শাখায় ৫ রকমের আমের ফলন হয়। সে সাথে দুষ্প্রাপ্য নবাব সিরাজদৌল্লা’র টেবিলের আম কহিতুর শোভা পাচ্ছে তার বাগানে। এ দুষ্প্রাপ্য আমসহ ৫০ প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফলের চাষ হচ্ছে এ বাগানে।
সরেজমিনে গিয়ে এবং বাগান মালিক মো. আবু তৈয়বের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর প্রবাসে থেকে ২০১১ সালে দেশে ফিরে শখের বাগান শুরু করেন। ৬৫ শতক জমি ক্রয় করে ১০ বছর ধরে এ বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম, কাঠাঁল, কলা, মালটা, সরিপা, লিচু, লেবু, কমলা, জাম্বুরা, নারিকেল, পেয়ারা চাষ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বাগানে আলফ্রান্সো, সূর্য ডিম, নামডকমাই, কিউজায়, অকরং, মহাচনক, থাইওয়ান রেডম্যাঙ্গো, গ্রীনম্যাঙ্গো, চোকানান, বেনানা, কল্যাণ ভোগ পালমার, থ্রিটেস্ট, কিংঅব, সাকাপাত, চোষা ইন্ডিয়ান, চোষা পাকিস্তান, পুসা সোরাইয়া, রানী পছন্দ, জর্দালু, তোতাপুরী, আনোয়ার রাতাউল, দশেরী, হাইব্রিড-১০, বেগমফুলী, কোহিতুর, চিয়াংমাই, শীতাভোগ, কোশরী, ইমাম পছন্দ, নুরজাহান (প্রতিটি আমের ওজন ৪-৫ কেজি), কেনচিনটন প্রাইড, থাই কাচা মিটা, বি.এম-৭ বা বেগুণী আম, কেশর, ম্যাংগোমিন, সদাবাহার, সেভেন স্টেপ আর-২, ই-২, কাটিমন, মল্লিকা, গৌরমতি, হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪, আ¤্রপালি জাতের আমের চাষ হচ্ছে এ বাগানে। থাইল্যান্ডের রেড আই রবিকে বাংলাদেশে চ্যাংমাই থাই-১ আম বলা হয়ে থাকে। এ বাগানে নুর জাহান ও মাংগোমিন প্রজাতির আম প্রতিটি ২ থেকে ৫ কেজি ওজনের হয় বলে জানালেন তিনি। এ বাগানে ১২ মাস আমের ফলন হয় এমন গাছও রয়েছে। যে গাছে গুলোতে জানুয়ারি মাসে ফল আসলে ও এখনো পর্যন্ত এসব ফল পরিপূর্ণ পরিপক্ক হয়নি। তার মতে ৭ থেকে ৮ মাস পর তথা জুলাইয়ের পর থেকে এসব আম পাকা শুরু হবে। যখন দেশে প্রচুর পরিমাণে আম পাওয়া যাবে না। এ বাগানে সবচেয়ে মূল্যবান আম হিসেবে কহিতুর আমকে তিনি দুলর্ভ আম হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এ আমটি নবাব সিরাজদৌল্লা’র মহলে খাওয়ানো হত। তারা নবাব পরিবারের মধ্যে এ আম উপহার হিসেবে দিতেন। এ আমের বৈশিষ্ট্য হল, আমটি পাকার পর বাশেঁর চিলা দিয়ে কাটতে হয়, ধাতব পদার্থ আমে লাগলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যায়। তাছাড়া আমটি দিনে বা রাতে যে সময় পরিপক্ক হবে তখনই গাছ থেকে ছিড়ে নিতে হবে। আমটি পরিপক্ক হওয়ার সাথে সাথে পড়ে যায়, আর নিচে পড়ে গেলে আমের প্রকৃত স্বাদ হারিয়ে যাবে। তিনি বলেন, টেলিভিশনে চ্যানেল আইয়ে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে দেখে শাখা কলম শিখে তিনি নিজে এখন তার বাগানে একটি গাছে ৪ থেকে ১২ রকমের আমের ফলন ফলাচ্ছেন। তার এ বাগানে নাগপুরি, দার্জিলিং, পাকিস্তানি-১,২, ভূটানি, মিশরীয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, চাইনা, ডেকোফন, চাতকের কমলা, ফিকিনে অরেঞ্জ, বারি-১, বাউ-৩, মাল্টা তারাকো (বøাড মালটা), মোরো, চেনগুনিলো, হিয়ারলোম নেভেল মালটা, কাগজী এলাচ, সীডলেন্স লেবু, হলুদলেবু, কাফের লাইন, দেশী লেবু, বলসন্দুরী কুল, সীডলেন্স কুল, কাশমিরী কুল, এসএনবি, ইসরাইলী, চায়না। তার বাগানের উৎপাদিত ফল তিনি বিক্রি না করে স্বজনদের মাঝে বিলি করে দেন। তার একটি গাছে এক মৌসুমে ৪-৫ হাজার টাকার আম উৎপাদন হয়। তিনি বলেন, মানুষ গাছ রোপণ করে ২০ বছর পর ২০/৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করায় আশায়। অথচ ফলজ গাছ রোপণ করলে ১ বছর পর থেকে হাজার হাজার টাকার ফল বিক্রি করা যাবে।