বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ফটিকছড়ি

18

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢলে ফটিকছড়ির বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এখানকার অনেক বীজতলাসহ ডুবে গেছে বহু গ্রামীণ রাস্তাঘাট, মৎস্য খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাহাড়ী ঢল ও অভিরাম বর্ষণের কারণে হালদা নদী ও ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি , সর্তা ও তেলপারাই খালের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে উপজলার দাঁতমারা, নারায়নহাট, ভ‚জপুর, পাইদং, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর, লেলাং, বক্তপুর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট, জাফতনগর, ও সুন্দরপুর ইউনিয়নের একাধিক এলাকা পানিতে নিমজ্জিত । এছাড়া ফটিকছড়ি পৌরসভা ও নাজিরহাট পৌরসভার কয়েকটি বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাজিরহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ভাঙা দিঘির পাড় এলাকায় মাওলানা আব্দুল মান্নান ঘর হালদা গর্ভে বিলীন হবার উপক্রম হয়েছে । তাছাড়া উপজেলা জুড়ে কৃষকের আমনের বীজ তলা তলিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে কার্পটিং সড়ক, ব্রিক সলিন সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা গুলো। ফলে আতঙ্কে মধ্য জীবন যাপন করছে লাখ লাখ মানুষ।
তাছাড়া হালদা নদীতে থেকে লোকালয়ে উপজেলার হারুয়ালছড়ির বড়ুয়া পাড়া এলাকায় বন্যার পানিতে জালে ধরা পড়েছে একটি জীবিত ডলফিন। সেটা স্থানীয়রা আবার হালদা নদীতে ছেড়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-সদস্যদের অনুপস্থিত থাকায় সৃষ্ট বন্যা মোকাবেলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট আতাউল্লাহ পাড়া হালদা নদীর পাড়ে বানবাসী ও ফটিকছড়ি পৌরসভার ধুরুং খাল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি যুগ্ম আহব্বায়ক সরোয়ার আলমগীর। তিনি বলেন, প্রশাসন ফটিকছড়িকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। সাথে বানবাসীর পাশে থাকার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীসহ বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ জানান এ বিএনপি নেতা।
প্লাবিত এলাকার মৎস্যচাষিরা বলেন, প্রবলবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে শত শত মৎস্য প্রজক্ট সবকটি ভেসে গেছে। এত কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।
ভূজপুর এলাকার মাওলানা মো. নেজাম উদ্দিন জানান, সেখানে বানবাসীদের পাশে দাঁড়িছেন স্থানীয় হুজুরা।
হারুয়ালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো.ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় বন্যার পানিতে গ্রামীণসড়কসহ আমান ধানের বীজ তলা তলিয়ে গেছে। প্রায় ৫শত পরিবার পানিবন্দি রয়েছে । তিনি অনেক এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান।’
পাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সরোয়ার হোসেন বলেন, এবারের বন্যার পানিতে বহু গ্রামীণ সড়ক ডুবে গেছে। মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কৃষি জমি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লেলাং ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দীন চৌধুরী শাহিন বলেন, তার এলাকায় অনেক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। কৃষি জমির ফসল তলিয়ে গেছে।
নানপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুন নবী রোশন জানান, বানবাসীদের পাশে তার নিজ তহবিল থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। টানা বৃষ্টির কারণে ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
খিরাম ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সৌরভ জানান, যারা পাহাড়ী এলাকার পাদদেশে বসবাস করছে তাদেরকে নিরাপদ স্থান আশ্রায়ণ কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে।
জাফাতনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন বলেন, টানা বৃষ্টিতে মোহাম্মদ তকিরহাট টু সমিতিরহাট সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। কৃষি জমিতে আমানের চারা (ধান) পানিতে ডুবে গেছে।
বক্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুল আজম বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও সত্তা খালের পানিতে ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ ওয়ার্ডের প্রায় ৩০টি বাড়ির মানুষ পানিবন্দি রয়েছে । ইউএনও এর সাথে কথা বলেছি বরাদ্দের জন্য।
সমিতিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, পাহাড়ি ঢল ও তেলইপাড়া খালের ভাঙ্গনে আজাদী বাজার, নানুপুর বাজার, তকিরহাটে যাওয়ার জন্য যে সড়কগুলো আছে সবই পানিতে ডুবে গেছে। কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত। অনেক মৎস্য প্রজক্টের মাছ ভেসে গেছে বলে তিনি জানান।
এ নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কয়েকটি স্থানে ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে । প্রায় ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে খুলে দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃক ঠিম গঠন করা হয়েছে। গঠিত দলগুলো মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন । ইতিমধ্যে সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।