বন্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে ফটিকছড়ি

7

মো. এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি

ফটিকছড়িতে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর বন্যার তাÐবের ক্ষত চিহ্ন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের ক্ষত বেরিয়ে পড়ছে সময়ের ব্যবধানে। ধসে পড়েছে কাঁচা ও মাটির ঘর। নষ্ট হয়েছে নিমজ্জিত ঘরবাড়ির অনেক আসবাবপত্র। দেখা দিয়েছে গ্রামীণ সড়কে কালভার্টের দুই পাশে বড় বড় গর্ত। গ্রামের ছোট ছোট অনেক রাস্তা যেন অস্তিত্বহীন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর নিজেদের বাড়িঘরের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকে ঘরের মেঝেতে পা ফেলতে গেলে হাঁটু পর্যন্ত দেবে যাচ্ছেন। বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষারীরাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকের বাড়িতে পালন করা হাঁস-মুরগিও মারা গেছে। উপজেলা জুড়ে আমন ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যায় আংশিক ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে ৭ হাজার ২০০ টি এবং সম্পূর্ণ ৬০০ টি। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। ২৯ হাজার ব্রয়লার মুরগী এবং ৫ হাজার লেয়ার মুরগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২৪টি ট্রান্সফরমার, ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি, শত শত বিদ্যুৎ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় হালদা নদী ও ধুরুং, লেলাং, মানাইছড়ি, কুতুবছড়ি, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি, গজারিয়া, শোভনছড়ি, রক্তছড়ি, সর্তা ও তেলপারাই খালের পানি কমতে শুরু করে। এর আগে কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে এসব নদী ও খালে পাড়ের একাধিক স্থানে ভেঙে গিয়ে পানি ঢুকে ফটিকছড়ির বাগান বাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, পাইন্দং,হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, রোসাংগিরী, নানুপুর, লেলাং, বক্তপুর, ধর্মপুর, সমিতিরহাট, জাফতনগর, আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে তান্ডব চালায়। এছাড়া ফটিকছড়ি পৌরসভা ও নাজিরহাট পৌরসভার অধিকাংশ জায়গায় তান্ডব চালিয়েছে এ বন্যা। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। বন্যার পানিতে গহিরা-হেঁয়াকো সড়ক, নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়ক, কাটিরহাট-সমিতিরহাট-আজাদী বাজার সড়ক, সমিতিরহাট-নানুপুর সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে পানি সরে যাওয়ায় স্বাভাবিক হয় যান চলাচল।
এদিকে বানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন দল মত নির্বিশেষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বৃত্তবানরা। তাদেরকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনী।
উপজেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বে থাকা ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে ১৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ জানান, বন্যায় আনুমানিক ২২ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৩৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক, ২৬৮ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক, ৩০টি ব্রিজ, ১২০টি বক্স কালভার্ট, ৭৪টি ¯øাব কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়ক ও কালভার্ট।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বন্যার পানি এখন নাই। বন্যায় কাঁচা ঘরবাড়ি, সড়ক, কালভার্টসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকালীন সময়ে মাঠে থেকে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ বিতরণ করেছি, এখনো অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে দুই দিনের মধ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের ছবিসহ তালিকা প্রদান করতে বলা হয়েছে। তালিকা হাতে পেলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ঘর মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রাপ্ত অর্থ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে চাইলে তারা উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে প্রদান করতে পারেন বলে তিনি জানান।