‘বন্ধু রাষ্ট্রে’ কীভাবে এতদিন নিরাপদে সালাহউদ্দিন

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভারতে গিয়ে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হওয়ার ঘটনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন ওবায়দুল কাদের। ‘বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে খুন বলে’ বিএনপি মহাসচিব যে টিপ্পনী কেটেছেন, তার জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “এই ধরনের অপবাদ কেন দিচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রকে?”
বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সাংস্কৃতিক উপকমিটির আয়োজনে ‘সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায়’ বিষয়ে এক আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
কাদের বলেন, “ফখরুল সাহেব বলেছেন, ‘বন্ধু রাষ্ট্রে গিয়ে নিরাপত্তা নাই।’
“আপনাদের যদি ‘শত্রু রাষ্ট্র’ হয়, সেখানে সালাহউদ্দিন (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ) এতদিন নিরাপদে কেমন করে আছেন। তাকে তো কেউ হত্যা করেননি। তার জীবনে তো নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়নি, জীবনের কোনো হানি ঘটেনি। এই ধরনের অপবাদ কেন দিচ্ছে বন্ধু রাষ্ট্রকে?”
২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি যখন আন্দোলন করছিল, তখন দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদে ছিলেন সালাহ উদ্দিন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়ে দলের মহাসচিবসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে সালাহ উদ্দিন দলের মুখপাত্র হিসেব আত্মগোপনে থেকে গণমাধ্যমে কথা বলতেন।
রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হওয়ার ৬৩ দিন পর ২০১৫ সালের ১১ মে সিলেটের ওপারে মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতের প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের বিচারিক আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলং জজ আদালত তাকে খালাস দেয়। তবে পাসপোর্ট না থাকায় বিএনপি নেতা ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে গত বছরের ৮ জুন বাংলাদেশে ফিরতে ট্রাভেল পাস পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানান বিএনপি নেতা। কিন্তু এক বছরেও তিনি ফেরেননি।
আনোয়ারুল আজীমের ঘটনা নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কলকাতার নিউটাউনে আমাদের একজন এমপি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন। গত দুই তিন দিন ধরে তাকে নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। তার পরিবারসহ কেউ জানে না।
“চিকিৎসা জন্য তিনি ভারতে গেছেন। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের একজন এমপি যখন চিকিৎসার জন্য যান, তিনি কিন্তু ভারত সরকারকে জানিয়ে যান না। সেখানকার যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে গেলে নিরাপত্তার ব্যাপারটি তখনই দেখা হয়। এখানে বন্ধু রাষ্ট্রের…।
“তাকে (আনোয়ারুল আজীম) যে ফ্ল্যাটটিতে হত্যা করেছে, সে ফ্ল্যাটটি বাংলাদেশের কেউ ভিন্ন নামে ক্রয় করেছে। ওখানে যারা হত্যা করেছে পাঁচ-ছয়জনের মত, এর মধ্যে পাঁচ জনই বাংলাদেশের। এই ব্যাপারটা নিয়ে ‘যার দেখতে নাড়ি, চলন বাঁকা’, এই ধরনের উক্তি করা সমীচীন না।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতার নিউ টাউন এলাকার এক ফ্ল্যাটে খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ। তবে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতার নিউ টাউন এলাকার এক ফ্ল্যাটে খুন হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার পুলিশ। তবে তার মরদেহ পাওয়া যায়নি
একই দিন দুপুরের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বিষয়টি নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক নয়, তাদের তথাকথিত একজন সংসদ সদস্য বিদেশে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেলেন। তার কোনো খবর দিতে পারলেন না তারা। না পারল বাংলাদেশ সরকার, না পারল তাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। তাহলে আমরা কী মনে করব?
“দুর্নীতি করা, বিদেশের মাটিতে টাকার পাহাড় তৈরি করা, এটাই ঘটনা কিনা আমরা জানি না।”
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দেশটির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “ডনাল্ড (যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু) আসলেন সম্পর্ক এগিয়ে নিতে। সেখানে আবার তিনি যেতে না যেতেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আগে ৭ জনের ওপর, এখন আবার একজন।
“আমি এই কথাই বলতে চাই, যারা গাজায় গণহত্যা ঘটাচ্ছে, তাদের এই নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত ভূমিকাকে গণহত্যা বলতে চায় না, তারা কোথায় কাকে নিষেধাজ্ঞা দিল, তাতে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”
সেনাবাহিনী নিজেদের নিয়মে চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেশের সশস্ত্র বাহিনী, তাদের কিন্তু আলাদা নিয়মকানুন আছে। সেখানে যদি কেউ অপরাধ করে থাকে, সেটা প্রমাণিত হলে কোনোদিনও ছাড় দেওয়ার লোক বঙ্গবন্ধুর কন্যা না।”
আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান মঞ্চ সারথি আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনিসুল ইসলাম ছিলেন।