বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বটে বেড়িবাঁধগুলোর নড়বড়ে অবস্থা ভেসে উঠেছে

11

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের পুরো শক্তি নিয়ে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় আঘাত হানবে বলে আভাস ছিল আবহাওয়া অধিদফতরের। জানমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কেটেছে গত কয়েকটি দিন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় সর্বাত্মক ব্যবস্থা।
ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের একটা বড় অংশজুড়ে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হলেও শেষ পর্যন্ত এর মূল আঘাতটি পড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তবে ভারতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সঠিক জানা যায় নি। বাংলাদেশে যখন আঘাত করে তখন এর শক্তি অনেকটা কমে আসে। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।
সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ২৬ মে রোবরার দুপুর থেকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। রোববার সন্ধ্যায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবন দিয়ে উপকূলে আঘাত হানে রিমাল। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোরসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকা।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে দেড় লাখের বেশি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় আট লাখ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে, সেখানে আশ্রিত গৃহপালিত পশুর সংখ্যাও অর্ধলাখের বেশি।
দূর্যোগ প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১৯টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার সংখ্যা ১০৭ এবং ইউনিয়নের ও পৌরসভার সংখ্যা ৯১৪ বলেও জানান। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ জনের মৃতু্যুর খবর পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী মহিববুর।
তিনি আরো জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯৬ জন। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। আর আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৯২টি ঘরবাড়ি।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা পেয়েই উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আট লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়াসহ আশ্রিত পশুর সংখ্যা ৫২ হাজার ১৪৬।
আর দুর্গত মানুষদের চিকিৎসা দিতে এক হাজার ৪৭১টি মেডিকেল টিম গঠন করে মাঠে নামানো হয়েছে।
মন্ত্রী আরো জানান, দুর্যোগকবলিত মানুষের সাহায্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি আমরা। ক্ষতিগ্রস্তদের অনুক‚লে ছয় কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ১৫ জেলায় তিন কোটি ৮৫ লাখ নগদ টাকা এবং পাঁচ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য কেনার জন্য দেড় কোটি করে টাকা হয়েছে হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
অপরদিকে, সামবার সকাল থেকে অতি ভারী বর্ষণে আবারও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীতে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্দরনগরীর বাসিন্দারা। ২০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে নগরবাসী।
ঝড়ো হাওয়ার প্রভাব তেমন না পড়লেও চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয় ভোররাত থেকে। দুপুর গড়াতেই বিভিন্ন জায়গায় কোমর সমান পানি জমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলি চলে পানির নিচে। ঘর থেকে বের হয়ে বিপাকে সাধারণ মানুষ।
জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী মানুষ। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানবাহন কম। এ সুযোগে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে রাস্তায় চলা অল্প সংখ্যক যানবাহন।
এদিকে বৃষ্টির কারণে নগরের আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, হালিশহরসহ বিভিন্ন নি¤œাঞ্চল এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে ঢুকে গেছে পানি। পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উন্মুক্ত নালা ও ফুটপাতের ভাঙা ¯ø্যাব পথচারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়িয়েছে।
অপরদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।
রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে নগরে লোডশেডিং বেড়েছে। উপক‚লীয় অঞ্চলগুলোতে ঝড়ো বাতাসে গাছ পড়ে দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার কোটি টাকায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
২০২০ সালে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো বলছে, পুরোপুরি শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। ধারণা করা যায়, এবছরও চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবেনা। এছাড়া বেড়িবাঁধের নির্মাণ ত্রুটিও চোখে পড়েছে। উকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে, এতে ঘরবাড়ি ও ফসলিজমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা মনে করি, দুর্যোগপ্রবল এ দেশে বেড়িবাঁধগুলো আরো টেকসই হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে সরকার দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে প্রত্যাশী।