বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্যৈষ্ঠের মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহের মধ্যেই দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এ সংলগ্ন পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় গতকাল বুধবার একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা কিংবা তিন দিনে এটি আরও ঘনীভ‚ত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর প্রভাবে আগামী পাঁচ দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। একই সাথে এ কয়েকদিন চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহও অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আর সেখান থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। এটি নিম্নচাপ থেকে শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি মধ্যপ্রচ্যের দেশ ওমানের দেয়া।
আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে গতকাল বুধবার প্রকাশিত ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর ঢাকা, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, ফেনী, কক্সবাজার, বাগেরহাট, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বজায় থাকতে পেতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, লঘুচাপটি চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধানে বা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে। আগামী শুক্র বা শনিবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তবে এখনো তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টের (ইসিএমডব্লিউএফ) এক ঘোষণায় বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণে সুন্দরবনের কাছাকাছি ২৬ থেকে ২৭ মে আঘাত হানতে পারে। তবে ঘোষণায় এ কথাও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃতি সব সময় ঠিক থাকে না। এর গতিপথ এবং গতি পরিবর্তিত হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ২৬ মে সকাল ছ’টার পর থেকে রাত ১২টার মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রবর্তী অংশ উপক‚লীয় এলাকায় প্রবেশ করা শুরু করতে পারে সকাল ছ’টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে বিকেল ছ’টার মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছন দিকের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি স্থলভাগে প্রবেশ করতে রাত ১২টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
শেষমেষ লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশংকা রয়েছে। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপক‚লীয় জেলাগুলোর উপক‚লে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় একশ’ থেকে একশ’ ২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় একশ’ ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম, যা পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। সে ঝড়ের তেমন কোনও প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। তার আগে ২০২০ সালের ২০ মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বেশ বিধ্বংসী ছিল ঘূর্ণিঝড়টি। তবে সুন্দরবনের কারণে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল দেশের উপকূল। তারও আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলা।
এদিকে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় এরইমধ্যে প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর প্রভাবে ২৩ ও ২৪ মে থেকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়-তুফান শুরু হতে পারে। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা ও সম্ভাব্য সকল প্রকার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগীয় প্রধান এবং তাদের অধীনস্থ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।