ফের পাল্টালো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পোশাকের রঙ

5

পুলিশ বাহিনীর আপত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের পোশাকের রঙে আবারও পরিবর্তন আসছে; এ নিয়ে তৃতীয়বারের মত পোশাকের রঙ পাল্টাচ্ছে অধিদপ্তর।‘টার্কিশ ব্লু’ ইউনিফর্মের পরিবর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্মীদের পোশাক এখন থেকে হবে ‘আইভরি বেইজ’ রঙের; প্যান্ট ও টুপির রঙ ‘ডিপ নেভি ব্লু’ থেকে বদলে হবে কালো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিবর্তিত পোশাকের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের
কিন্তু পোশাকের নতুন রঙ নিয়েও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খানিকটা আপত্তি জানাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, নতুন রঙটিও পুলিশের এসপিবিএন ইউনিটের সঙ্গে মিলে গেছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ও অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক তানভীর মমতাজ বলেন, আগে এ রঙটি (আইভরি) পুলিশের স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসবিপিএন) থাকলেও তাদের পোশাকের রঙ পাল্টে গেছে। তারা এখন ব্যাটালিয়ন পোশাকে চলে যাচ্ছে। মন্ত্রী মহোদয়, পুলিশ ও মাদক কর্মকর্তাদের একটি সভায় আইজিপি মহোদয় বলেছেন, এ পোশাকে (আইভরি) কোনো সমস্যা নাই। এ পোশাকটা নিতে তিনি প্রপোজ করেছেন।মাদক অধিদপ্তরের এখনকার টার্কিশ ব্লু রঙের পোশাক নিয়ে কারা অধিদপ্তর আপত্তি জানিয়েছিল এবং পুলিশ বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছিল বলে জানান পরিচালক তানভীর। অধিদপ্তরের সদস্যরা কবে থেকে নতুন পোশাক পরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বছর (অর্থ বছর) আমরা কিছু কেনার চেষ্টা করছি। যেহেতু সময় বেশি নেই, আগামী অর্থ বছরের শুরু থেকে সবাই নতুন পোশাক পরিধান করতে পারবে।
টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যে সবার পোশাক তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ২০১৪ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রথম পোশাকের আওতায় আসে। ওই বছর মন্ত্রণালয় থেকে অধিদপ্তরের সিপাহি থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘খাকি রঙের’ পোশাক দেওয়া হয়। তবে সেই পোশাক নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। ২০২১ সালের ২৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের জন্য পদবী অনুসারে ব্যাজ নির্ধারণ করে ‘পোশাক সামগ্রী প্রাধিকার বিধিমালা-২০২১’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ।
ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অতিরিক্ত পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, প্রসিকিউটর, পরিদর্শক, সহকারী প্রসিকিউটর ও উপ-পরিদর্শক, সহকারী উপ-পরিদর্শক, সিপাহি, ওয়ারলেস অপারেটর ও গাড়ি চালক পর্যন্ত সকলকেই পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। তখন শার্টের রঙ নির্ধারণ করা হয় ‘টার্কিশ ব্লু’ আর প্যান্ট ‘ডিপ নেভি ব্লু’, সঙ্গে অধিদপ্তরের লোগো সম্বলিত টুপি। ওই প্রজ্ঞাপন জারির কিছু দিন পর নতুন পোশাক নিয়ে আপত্তি তোলে পুলিশ বাহিনী। তাদের আপত্তিতে অধিদপ্তরের পোশাক পরিধান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। যে কারণে ওই বছরের অগাস্টের শেষ দিকে পোশাক পরিধানের সিদ্ধান্তটি স্থগিত রাখতে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে ইউনিট প্রধানদের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, যে রঙের পোশাক (টার্কিশ ব্লু) তৈরি করা হচ্ছে, সেটা অন্য বাহিনীর পোশাকের সঙ্গে কিছুটা মিলে যাচ্ছে। তাই পোশাক পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
আপত্তির পর ২৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হয়। সেসময় দুই পোশাকের রঙ নিয়ে আলোচনায় পুলিশের ওই আপত্তি টেকেনি। এরপর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম শেষে ১ নভেম্বর পোশাক পরিধানের লিখিত আদেশ আসে মন্ত্রণালয় থেকে। আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে বাহিনীর সদস্যদের ওই বছরের ৩ নভেম্বর থেকে পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বাহিনীর সৈনিক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত পরিচালক পর্যন্ত সবাই টার্কিশ ব্লু রঙের পোশাক পরিধান করে আসছেন। তবে ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পুনরায় পোশাকের রঙ পরিবর্তনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সবশেষ মঙ্গলবার টার্কিশ ব্লু’র পরিবর্তে আইভরি রঙ নির্ধারণ করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন রঙ নিয়ে আপত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ নারকোটিক্স কন্ট্রোল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, আমরা চাই না পোশাকের রঙ পরিবর্তন হোক। টার্কিশ ব্লু রঙের পোশাকটি ভেটিং করে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ পোশাকের সঙ্গে অন্য কোনো ইউনিটের পোশাকের মিল নেই। বিষয়টি আমরা মন্ত্রী মহোদয়কে জানিয়েছিলাম।
এবারের পরিবর্তিত রঙটি পুলিশের এসবিপিএনের পোশাকের সঙ্গে মিলে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুনেছি এ রঙ নির্ধারণের আগে কোনো ভেটিং হয়নি। যদি এ পোশাক নিয়েও আপত্তি ওঠে, তাহলে তো সরকারের অনেক টাকা গচ্চা যাবে।