ফের তাপপ্রবাহের দুঃসংবাদ

7

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজধানী ঢাকায় গতকাল শনিবার সকালেই যেনো সন্ধ্যা নেমেছিল। ঘনকালো মেঘের সাথে টানা দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। শুক্রবারের হালকা উষ্মতা কাটিয়ে অনেকটা শীতল হয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।
তবে কয়েক দিনের ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে মে মাসের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশে যে স্বস্তি ফিরে এসেছিলো তা হয়তো বেশিদিন স্থায়ী হচ্ছে না। কারণ আবহাওয়া অফিস যে পূর্বাভাস দিচ্ছে, সে অনুযায়ী চলতি মাসের মাঝামাঝি আবার আসছে অস্বস্তিকর গরম।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ রোববার থেকে দেশের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকলেও বাড়তে শুরু করবে মঙ্গলবারের পর থেকে। খবর বিবিসির।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী সোমবারের পর থেকেই একটু একটু করে বাড়বে তাপমাত্রা।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, আগামী ১৪ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপরই বাড়বে তাপমাত্রা। ১৫ তারিখ থেকে বইতে শুরু করবে তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসে যে তীব্রতা দেখা গেছে, ততোটা তীব্র হবে না মে মাসের তাপপ্রবাহ। মে মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে যে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায়, সেটি হতে পারে মৃদু থেকে মাঝারি।
আওহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, বজ্র-ঝড়ের তীব্রতা কমে গেলেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ মৃদু তাপপ্রবাহই হবে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হতে পারে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২০ তারিখের পরে বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রপাত- সেই সাথে হতে পারে কালবৈশাখী ঝড়ও। জুনে বর্ষাকাল শুরুর আগ পর্যন্ত সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সাথে হতে পারে শিলাবৃষ্টিও।
মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড : গতকাল সকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে হয়েছে তুমুল বৃষ্টিপাতও। মেঘলা আকাশের কারণে সকালের শুরুতে সূর্যের দেখা মেলেনি ঢাকার বেশিরভাগ জায়গায়। সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ঘন কালো মেঘে ঢেকে যায় রাজধানীর বেশিরভাগ জায়গা। এরপরই শুরু হয় ভারি বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ঢাকায় একনাগাড়ে ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, এটি এ বছরের মধ্যে দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এর আগে সকাল ছয়টা পর্যন্ত সারাদেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ছিল টাঙ্গাইলে ৪৯ মিলিমিটার।
মুষলধারে বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক। মূল সড়ক থেকে অলিগলিপথ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এই বৃষ্টিতে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা।
সরকারি ছুটির দিন হলেও বেসরকারি অফিস খোলা থাকায়, সকালে যারা বাইরে বের হয়েছিলেন তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
আগামী তিন দিনের পূর্বাভাস : ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া অফিসের এই পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে আজ রংপুর, রাজশাহী ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’য়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, আজও সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে আগামীকাল সোমবারও। এদিন খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পাতে পারে।
বৃহস্পতিবার থেকে তাপপ্রবাহ : আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সেটি কমতে শুরু করবে মঙ্গলবার থেকে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মে মাসের ৫ তারিখ রাত থেকে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে দেশের তামপাত্রা ৩২ থেকে ৩৪ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
আওহাওয়াবিদরা বলছেন, সোমবারের পর থেকে বজ্র ঝড়ের তীব্রতা কমে যাবে। তখন বৃষ্টি কমতে কমতে এক পর্যায় তাপমাত্রাও বাড়তে শুরু করবে।
তাহলে এই তাপমাত্রা কতটা বাড়তে পারে? কিংবা এটি কী তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিতে পারে? এমন প্রশ্নে আবহাওয়াবিদরা দিচ্ছেন কিছুটা স্বস্তির খবর।
তারা বলছেন, আগামী বুধ-বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হতে পারে এই তাপপ্রবাহ। এসময় রাজশাহী, যশোর, নওগাঁ অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। আস্তে আস্তে সেটি আসতে পারে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার পশ্চিমাঞ্চলের দিকে।
আবহাওয়া অফিসের হিসেব মানদন্ড অনুযায়ী যখন কোন স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে তখন সেটিকে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আগামী ১৫ তারিখের পর থেকে বাংলাদেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হবে। এই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। তবে ৩৮ ডিগ্রি পর্যন্ত নাও উঠতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর যদি নতুন করে বৃষ্টিপাত শুরু না হয়, তাহলে এর তীব্রতা বাড়তেও পারে।
তবে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আগামী বুধ-বৃহস্পতিবারের দিকে যে তাপপ্রবাহ আসছে সেটি সর্বোচ্চ ১৯ থেকে ২০ মে পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।