ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় আজ ভোট

16

পূর্বদেশ ডেস্ক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামের ৩ উপজেলাসহ সারা দেশে ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৮টায়। এ লক্ষ্যে ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অন্যান্য অপরাধরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারের ৬০ কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তিন উপজেলায় ৬০ জন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
তিন উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলায়। এ উপজেলায় ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হাটহাজারী উপজেলায় ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
ফটিকছড়িতে লড়ছেন ৮ প্রার্থী : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৪ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী, ২ নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ মোট ৮ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ২টি পৌরসভা ও ১৮ ইউনিয়নের ১৪২টি কেন্দ্রে ৭শ ৭৬টি স্থায়ী এবং ২শ ১৬টি অস্থায়ী বুথে ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৬ শত ৭ জন ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সকাল ৮টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রদান করবেন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯ শত ৩৮ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৬ শত ৬৭ জন রয়েছে। এছাড়া ২ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছে।
ভোটযুদ্ধে যারা লড়ছেন তারা হলেন চেয়ারম্যান পদে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন মুহুরী (মোটর সাইকেল), উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মু. বখতেয়ার সাঈদ ইরান (আনারস), ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ চৌধুরী (বই), সাংবাদিক সৈয়দ জাহেদ উল্লাহ কুরাইশী (তালা), ফটিকছড়ি পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন (টিউবওয়েল), মো. নাজিম উদ্দীন সিদ্দিকী (চশমা), নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন নাহার মুক্তা (প্রজাপতি), মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমীন আকতার নুপুর (ফুটবল)। সব প্রার্থীকে প্রচারণায় দেখা গেলেও ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক কাউন্সিলর মো. নাজিম উদ্দীন সিদ্দিকী (চশমা) কে প্রচারণা করতে দেখা যায়নি। এদিকে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রশাসনের নিকট সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানিয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন মুহুরী। অপরদিকে নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানান চেয়ারম্যান প্রার্থী বখতিয়ার সাইদ ইরান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে আজ ভোর ৪টায় ব্যালেট পেপার স্ব স্ব কেন্দ্রের জন্য বিতরণ করা হবে। ১৪২টি কেন্দ্রের জন্য ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৬ প্লাটুন বিজিবি, ২০ জন র‌্যাব, ৭ শত ৬৯ জন পুলিশ, ২ হাজার ৩৬ জন আনসার, ১০ জন ব্যাটেলিয়ন আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
হাটহাজারীতে চেয়ারম্যান পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজনসহ মোট ১১ প্রার্থীর ভক্ত ও সমর্থকরা আজ তাদের দীর্ঘদিনের কাঙ্কিত ভোটের জটিল সমীকরণ মেলাবে। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন চেয়ারম্যান পদে তিনজন, লড়াইও হবে ত্রিমুখী। তারা হলেন হাটহাজারী উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম রাশেদুল আলম (মোটর সাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরী নোমান (ঘোড়া) ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইউনুচ গণি চৌধুরী (আনারস)। এছাড়া ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে চার জন যথাক্রমে উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরী (বৈদ্যুতিক বাল্ব), শ্রী শ্রী পুÐরীক ধামের সাধারণ সম্পাদক অশোক কুমার নাথ (তালা), মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার (চশমা) ও ফকিরহাট ইউনাইটেড অর্গানাইজেশন এর প্রধান উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দীন (টিউবওয়েল) এবং ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) পদে চার জন যথাক্রমে-বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোক্তার বেগম মুক্তা (কলস), সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদা বেগম (ফুটবল), জাতীয় মহিলা সংস্থা হাটহাজারী উপজেলার চেয়ারম্যান শারমীন আক্তার (হাঁস) এবং উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিবি ফাতেমা শিল্পী (প্রজাপতি)।
এদিকে, নির্বাচনী এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে কয়েকজন প্রার্থীর উশৃঙ্খল কর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন না করার জন্য হুমকির পাশাপাশি পুলিশি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনী এলাকার বাইরের বিভিন্ন পেশাদার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ নানা লোকজনকে নির্বাচনের দিন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এক প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতি ইউনিয়নে ১ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্যরা, ১৬টি স্টাইকিং, র‌্যাব ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া প্রতি ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাছাড়া পুলিশের ২১টি বিশেষ মোবাইল টিম কাজ করবে। ভোট গ্রহণ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এবার প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সাদা পোষাকে নিয়োজিত থাকবে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে, সোমাবার দুপুরের পর থেকে ১০৬টি কেন্দ্রের স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের নেতৃত্বে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে, ব্যালেট পেপার আজ মঙ্গলবার ভোর চার থেকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসারদের মাধ্যমে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান সহকারী রিটানিং কর্মকর্তা।