ফটিকছড়িতে দুই ভাইকে হত্যার ঘটনায় মামলা

1

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি

ফটিকছড়ির জাফতনগরে নিহত দুই ভাই মো. জাহাঙ্গীর ও মো. আলমগীরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে তাদের নিজ এলাকার কবরস্থানে তাদের দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন গাউছিয়া কমিটির সদস্য ও এলাকাবাসী। এ সময় জাফতনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন জিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তাদের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সযোগে এলাকায় আনা হয়। শেষ বারের মতো মরদেহ দেখতে উৎসুক জনতাসহ আত্মীয়-স্বজনরা ভিড় করেন সেখানে। এ সময় নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
গত মঙ্গলবার বিকেলে পারিবারিক কলহের জেরে হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন আপন ২ ভাই মো. জাহাঙ্গীর ও মো. আলমগীর। এ ঘটনায় আহত হন আরও ৬ জন।
ফটিকছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) আবু জাফর মাহমুদ সালেহ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জানান, নিহতদের ছোট ভাই মো. রাসেল বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে রেজাউল করিমের স্ত্রী নিগার সুলতানার নাম উল্লেখ্য করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
জাফতনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দীন জিয়া বলেন, শুনেছি সমদ চৌধুরী বাড়িতে নুরুল ইসলামের পুত্র প্রবাসী রেজাউল করিমের সাথে তার স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছিল না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহের জেরে ঘটনার দিন প্রবাসী করিম নিজে তার স্ত্রী ও মেয়েকে দেশে তৈরি অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এ সময় প্রতিবেশি কয়েকজন প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত করিম ও তার ভাইয়েরা প্রতিবেশী বাচু ও সাহাব উদ্দিনকে দেশে তৈরি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। একপর্যায়ে করিমের চার ভাইয়ের মধ্যে মো. আলমগীর ও মো. জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলে নিহত হন। এতে আহত হন আরও ৬ জন। পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম, তারা রাতে এসে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জানাজা শেষে তাদের দাফন করা হয়।
রেজাউল করিমের মেয়ে নাজিফা নাছরিন (১৮) জানান, আমরা ১ বোন (আমি), ২ ভাই আবির হোসেন (১৬) ও নাবিল হোসেন (৮)। ঘটনার দিন পিতা রেজাউল করিম এবং আমার চাচারা আমার আম্মাকে (নিগার সুলতানা) ও আমাকে মারধর করছিলেন। তখন আমি কোনভাবে ঘর থেকে দৌড়ে গিয়ে প্রতিবেশীদেরকে জানাই। তারা এসে প্রতিবাদ করলে বাবা (রেজাউল করিম) ও চাচারা (জাহাঙ্গীর, আলমগীর, রাসেল) তাদের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে গণপিটুনিতে আমার দুই চাচা আলমগীর ও জাহাঙ্গীর নিহত হন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রেজাউল করিম প্রবাসে থাকাকালীন সন্দেহবশত (পরকীয়া) তার স্ত্রীকে তালাক দেন। তিনি গত মাসে বিদেশ থেকে দেশে ফেরে স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে চলে যেতে বলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা সামাজিক বৈঠক হয়। এ অবস্থায় ৩ মার্চ স্ত্রী ও মেয়েকে মারধর শুরু করেন রেজাউল করিম। তখন তার স্ত্রী বলে উঠেন দেনমোহরের টাকা দিয়ে দিতে।
এদিকে তার মেয়ে দৌড়ে সমাজের মানুষকে জানান। তারা এসে প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত করিম অস্ত্র দিয়ে কয়েকজনকে আহত করেন। এতে দু’পক্ষের সংঘর্ষের রূপ নেয়। একপর্যায়ে মো. আলমগীর ও মো. জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থলে নিহত হন।
এদিকে নিহতদের ছোট ভাই মো. রাসেল মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাইদের যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই। আমার আরেক ভাই (করিম) তাদের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।