প্রাণ বাঁচাতে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন ৬২৬ জন

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলার অবনতির মধ্যে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি, ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ৬২৬ জন ‘প্রাণ বাঁচাতে’ দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরে বলেছে, বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড রোধ, জীবন রক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
আইএসপিআর বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর ওই ৬২৬ জনের মধ্যে ৬১৫ জন নিজেরাই সেনানিবাস ত্যাগ করেন। এ পর্যন্ত ৪ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ- মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থী ৩ জন এবং তাদের পরিবারের চার সদস্যসহ মোট ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। খবর বিডিনিউজের।
সেখানে বলা হয়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ায় প্রাণনাশের আশঙ্কায় তারা সেনানিবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন।
যাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ২৪ জন রাজনীতিবিদ, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবার-পরিজন মিলিয়ে আরো ৫১ জন ছিলেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ ও পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করছে দাবি করে ‘গুজবে’ কান না দিয়ে সবাইকে ধৈর্যশীল ও সহযোগী মনোভাব প্রদর্শন করার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ জানান হয়েছে।
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে, প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এরপর থানা ও পুলিশের স্থাপনা, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দলটির বহু নেতাকর্মীর বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ওই পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনে শীর্ষ পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতা এবং মন্ত্রী ও এমপিরা। তারা কে কোথায় অবস্থান করছেন, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে।
এরই মধ্যে আত্মগোপনে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
শনিবার রাতে পাঠানো আরেক বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলেছে, সেনানিবাসের অভ্যন্তরে বর্তমানে বিদেশি মিশনের কোনো ব্যক্তি আর অবস্থান করছেন না।
এর আগে ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এমন কাউকে কাউকে তারা আশ্রয় দিয়েছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তারা শাস্তির আওতায় আসবেন।
তিনি বলেছিলেন, যাদের ওপর হামলার হুমকি রয়েছে- তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। যে-ই হোক, যে দল-মতেরই হোক, যে ধর্মেরই হোক। সেটা আমরা করব। অবশ্যই আমরা চাইব না, বিচারবহির্ভূত কোনো অ্যাকশন তাদের ওপর হোক।