প্রশান্তির বৃষ্টিতে ভোগান্তির জলজট

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের পর নগরীতে কালবৈশাখীর বৃষ্টির দেখা মেলে চলতি মে মাসের শুরুতে। বৈশাখের বিদায়ের প্রাক্কালে রাতে কিংবা সকালের এক পশলায় তপ্ত মরুতে ক্ষণিকের জন্য স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিলেও প্রাণীক‚লে প্রত্যাশিত তৃষ্ণা মিটছিল না। তবে গতকাল সোমবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামতেই আকাশ কালো করে নেমে আসা অঝোর ধারার বৃষ্টিপাত প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে। ঝড়ো হাওয়া আর বিরামহীন বজ্রপাতের সাথে বৈশাখের বৃষ্টিধারা নি¤œাঞ্চলে জলজট সৃষ্টি করেছে। এতে নগরবাসীকে প্রশান্তির পাশাপাশি ভোগান্তিও পোহাতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিকালের টানা এক ঘন্টার বৃষ্টিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে যায় নগরের রাস্তাঘাট ও অলিগলি। ঝুম বৃষ্টির কারণে শুধু যে জলজট তা নয়, বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। বিকালেই আঁধার নেমে আসে নগরজুড়ে। ভোগান্তি আর দুর্ভোগ সঙ্গী করে ঘরে ফিরতে হয়েছে অনেককেই। মাত্র এক ঘণ্টার নগরীর নি¤œাঞ্চলসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। নগরের পাঁচলাইশ, প্রবর্তক মোড়, দ্ইু নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, মির্জাপুল, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, ওয়াসা মোড়, তিন পোলের মাথা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, চকবাজার, বহদ্দারহাট, খতিবের হাট এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছিল। বিকেলের টানা বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অফিসফেরত কর্মজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাদের পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা যায়।আবার অনেক এলাকায় পরিবহনসংকট দেখা দেয়। এই সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করে নেন গণপরিবহনের চালকরা।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত রবিবার বিকেল চারটা থেকে গতকাল সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা তিনটায় বৃষ্টি শুরুর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে পানি জমে যায়। বিকেল সাড়ে চারটায়ও পানি নামেনি। প্রায় হাঁটুসমান পানিতে ডুবে থাকে রাস্তা। গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষের হেঁটে চলাচলের সুযোগও ছিল না। পথচলতি লোকজন সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করেন।
নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার সার্কিট হাউজের পাশে দুটি বেশ পুরাতন গাছ বাতাসের তোড়ে গোড়াসহ উপড়ে পড়ে সড়কে যানবাহন চলাচল একপাশে বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি এলাকায় এরকম বড়-ছোট গাছ পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কালবৈশাখীর তান্ডবে নগরীর বিভিন্ন কলোনির কাঁচাঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উড়ে গেছে বিভিন্ন বাড়ির চাল। পাহাড়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ঘরবাড়ির কি অবস্থা সেটা জানা সম্ভব হয়নি। তবে ঝড়ো বৃষ্টিপাত ও বাতাসের কারণে কয়েক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ট্রান্সমিটারসহ ভেঙে সড়কে পড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।
একটি বেসরকারি অফিসে বিকেলের পালায় কাজ করেন জাবেদুল ইসলাম। অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দুর্ভোগে পড়েন নগরের বাকলিয়া এলাকার এই বাসিন্দা। তিনি বলেন, বাসা থেকে বহদ্দারহাট এসে দেখেন পানি। এরপর শুলকবহরেও ছিল হাঁটুপানি। পরে উড়ালসড়ক দিয়ে আসেন। কিন্তু প্রবর্তক মোড়ে এসে আবার বিপাকে পড়েন। সেখানে হাঁটুপানিতে রাস্তা ডুবেছিল।
এমন সময়ে জলাবদ্ধতা যেন নিয়মিত ঘটনা চকবাজারের মুহাম্মদ শাহ আলী লেনে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চাক্তাই খালের পাশের এলাকায় বৃষ্টি শুরুর পরপরই পানি উঠতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে পাঁচটায়ও পানি জমেছিল বলে জানান বাসিন্দা আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভোগ যেন দূর হবে না। প্রতিবছরই আশ্বাস দেন কর্তারা, কিন্তু একবার বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলজটে স্কুলফেরত সন্তানদের নিয়ে বিপদে পড়েন অভিভাবকরা। নগরীর দামপাড়ার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সোহেলী চৌধুরী বলেন, তার মেয়ের স্কুল ছুটি হয় পৌনে পাঁচটায়। মেয়েকে আনতে গিয়ে দেখেন, ওয়াসা মোড় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিকল্প পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে পৌঁছান। মেয়েকে নিয়ে বাসায় পৌঁছাতে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ স্বাভাবিক সময়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে যাওয়া যায়।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। গোপালগঞ্জ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিস্যংখ্যানে কেন্দ্রীয়ভাবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টায় দেশের সর্বোচ্চ একশ’ ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ফেনী জেলায়। এছাড়া, চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের উপজেলায় একশ’ ২৯ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ৬০, সীতাকুন্ডে ৫৮, রাঙামাটিতে ৪০, কুমিল্লায় ১৯, চাঁদপুরে ৬১, নোয়াখালীর মাইজদীতে ৪১, কক্সবাজারে ১৪, কুতুবদিয়ায় ৬৫, টেকনাফে ১৫ এবং বান্দরবানে ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।