প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে ‘রেমাল’

14

নিজস্ব প্রতিবেদক

তাপপ্রবাহের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি আজ শনিবার ভোরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। যদি নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তাহলে এর গতিবেগ কত হতে পারে, সম্ভাব্য আঘাত হানার এলাকা কোনটি হতে পারে, সে সম্পর্কে অনুমিত তথ্য দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া এটি কোন ধরনের ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, তাও ধারণা দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গতকাল শুক্রবার বিকেলে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সেটি ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নিতে পারে। সে রকম হলে আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যায় এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সেটি বাংলাদেশের সুন্দরবনসংলগ্ন খুলনা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার উপকূলের দিকেই আঘাত হানতে পারে। এর বিস্তৃতি অপেক্ষাকৃত বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে নিম্নচাপ সৃষ্টির তথ্য জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এজন্য দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত এটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়, তবে এর নাম হবে ‘রেমাল’। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দেওয়া এ নামের অর্থ ‘বালু’। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হলেও গাণিতিক মডেলগুলো বলছে, এটি সৃষ্টি হলে বাংলাদেশের উপক‚লের দিকেই আসতে পারে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় একশ’ ২০ থেকে একশ’ ৩০ কিলোমিটার হতে পারে।
নিম্নচাপের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এটি আঘাত হানতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি এলাকা ধরে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের বা সামনের অংশের প্রভাব আগামীকাল রবিবার সকাল থেকেই বোঝা যাবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। পরদিন রবিবার থেকে বৃষ্টি আরও বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপক‚লসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাব্য সময় রবিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে। এ সময় ভাটা চলবে। তাই এ সময় আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কম। তবে রাত ১২টা বা এর পরে আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে সাতশ’ ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছয়শ’ ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে সাতশ’ ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছয়শ’ ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভ‚ত হতে পারে। নিম্নচাপকেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটার মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপকেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর মাঝারি ধরনের উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।