প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন হোক

3

মুদির বাজার থেকে মাছ-মাংস ও সবজির বাজার কোথাও স্বস্তি নেই। ডিম এখন সোনার হরিণ, ফলমূলের কাছে যাওয়া দূরুহ, শিশুদের দুগ্ধ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের দামও আকাশ ছোঁয়া। অবস্থা এমন যে, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও নাভিশ্বাস উঠছে। বাজারে গিয়ে দিশেহারা হচ্ছে মানুষ। আয়ের সাথে ব্যয়ের সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। দুর্বাগ্যের বিষয় হচ্ছে, সরকার যেসব পণ্যের উৎপাদন ও মজুত পর্যাপ্ত রয়েছে বলে ঘোষণা দেয় পরক্ষণে নানা কৌশলে, খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে সেগুলোরও দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বাজারে পণ্যের সরবরাহ যেন ঠিক থাকে, সে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সঠিক তদারকির অভাবেই তেল, চিনি, আটা-ময়দা, ডিমের মতো নিত্যপণ্যের দামের এমন অবস্থা। বাজারে অধিকাংশ নিত্যপণ্যেরই যে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে, সে তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বস্তুত কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর অবৈধ মজুত কৌশল, অতি মোনাফার উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট ইত্যাদির কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা, এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তা সাধারণকে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে যারা সিন্ডিকেট করে নানা অজুহাতে কারসাজি করছেন, এমন অসাধু মজুতদারদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনাই হবে বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পথ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অবশ্য বলছে, পণ্যের দাম সহনীয় করতে তদারকি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কুরবানির ঈদ ঘিরে তা আরও জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কোনো প্রতিফলন দৃশ্যমান হচ্ছে না। আমরা এর আগেও দেখেছি সরকার আইন ও বিভিন্ন উপায়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট ছিল, কিন্তু বাজারদর লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। অবস্থা এমন যে,বাজারে কোনো বিধিবদ্ধ নিয়মই কাজ করছে না এখন; বাজার চলছে মূলত কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের মর্জিমাফিক। সরকারের বেঁধে দেওয়া পণ্যমূল্যের কোনো তালিকার তোয়াক্কা না করেই বিক্রেতারা খেয়াল-খুশিমতো দাম রাখছেন। কোনো কোনো পাইকারি ও খুচরা কাঁচাবাজারে তো মূল্যতালিকাই খুঁজে পাওয়া যায় না। নিত্যপণ্যের মূল্যতালিকা নিয়ে এমন হযবরল অবস্থা বিরাজ করলে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ কীভাবে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তুলছে, তার তদন্ত হওয়া দরকার।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অতীতে ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্য নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি করা হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও তা কার্যকর করা যায়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আসন্ন ঈদে স্বস্তির পরিবর্তে চাপে থাকবেন ভোক্তারা। কাজেই এ কারসাজি যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে। বস্তুত সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে প্রয়োজন সময়মতো জোরালো পদক্ষেপ। ভুলে গেলে চলবে না, নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ও নিম্ন-আয়ের মানুষকে। তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে পারেন, সে জন্য যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে। লক্ষ করা গেছে, যখনই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, তখনই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা আরও বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট পণ্যের সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এটা স্পষ্ট যে, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে জটিলতা বাড়ছে। কাজেই এসব সমস্যার সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টিও খতিয়ে দেখে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।