প্রত্যেক বাংলাদেশির হৃদয়ে আবু সাঈদের ছবি খোদাই করা আছে

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ড. ইউনূস শহীদ আবু সাঈদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি আবু সাঈদকে স্মরণ করছি, যার ছবি প্রত্যেক বাংলাদেশির হৃদয়ে খোদাই করা আছে। কেউ এটি ভুলতে পারে না, কী অবিশ্বাস্য সাহসী যুবক ছিলেন তিনি! তিনি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং তারপর থেকে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা হার মানেননি। সামনে এগিয়ে গেছেন এবং বলেছেন, “যত গুলি মারতে পারো মারো, আমরা এখানে আছি”।’
আবু সাঈদের কবরের বাঁশের বেড়া ছুঁয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আবু সাঈদ এই কবরে শুয়ে আছেন। আজকে আমরা তার জন্য নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এদেশ সাধারণ মানুষের বাংলাদেশ। এখন আবু সাঈদ এক পরিবারের সন্তান না, সারা বাংলাদেশের সন্তান। এখন বাংলাদেশের যত সন্তান সবাই আবু সাঈদের বীরত্বগাঁথা, বুক পেতে দেওয়ার দৃশ্য দেখেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন স্কুলের পাঠ্যবইয়ে সাঈদের বীরত্বগাঁথা গল্প পড়বে তখন তারাও বলবে, “আমিও ন্যায়ের জন্য লড়বো। আমিও বুক পেতে দেবো।” সেই হলো আবু সাঈদ যে দেশের নতুন স্বাধীনতার জন্য নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। সবার প্রতি অনুরোধ, আবু সাঈদ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা যেন তা বাস্তবায়ন করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আবু সাঈদ শুধু একটি পরিবারের নয়, সারা বাংলাদেশের সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার সন্তান হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবার। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন কোথাও যেন কোনও গোলমাল না হয়। কেউ যেন ধর্ম নিয়ে কথা না বলে। আমরা সবাই এ মাটিরই সন্তান। সবার দায়িত্ব সমাজে বিশৃঙ্খলা দূর করা। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছেন, আমাদেরও তেমনিভাবে দাঁড়াতে হবে।’
পরে ড. ইউনূস শহীদ আবু সাঈদের বাসায় গেলে তার বাবা মকবুল হোসেন ও মা মনোয়ারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে পুলিশ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে।’ তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
এরপর পীরগঞ্জ থেকে সড়কপথে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহতদের দেখতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান প্রধান উপদেষ্টা। সেখান থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সার্কিট হাউসে অবস্থান করবেন।