‘প্রত্যয় স্কিম চালু হলে মেধাবীরা আর শিক্ষকতায় আসবে না’

11

চবি প্রতিনিধি

প্রত্যয় স্কিম চালু হলে বর্তমান মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী। অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার চবি শিক্ষক সমিতির টানা তৃতীয় দিনের মতো অর্ধদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চিত করে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা একটি গভীর চক্রান্তের ফসল। এই স্কিম চালু হলে আগামীতে মেধাবী শিক্ষকরা এই পেশায় আসতে অনীহা প্রকাশ করবে। শিক্ষকদের এত এত কম সুবিধার মধ্যেও আমরা চাকরি করে যাচ্ছি। কিন্তু এই প্রত্যয় স্কিম চালু হলে বর্তমান মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাইবে না।’
সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকরণ ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহবানে টানা ৩ দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল বৃহস্পতিবার ৩য় দিনের মতো অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করে চবি শিক্ষকরা।
এসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে প্রখর মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরাই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে এগুলো কর্তন করা হলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কখনো এই পেশার দিকে আকৃষ্ট হবে না। মেধাবী শিক্ষার্থীরা যদি এই পেশায় না আসে তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মেধাবী হিসেবে বেড়ে উঠবে না।’
শিক্ষক সমিতির সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলা উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন, কর্মসূচি ক্লাস বর্জন দেখার পরেও উপরমহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসছে না দেখে আমি আশাহত হয়েছি। এই প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের দাবি মেনে নিয়ে ক্লাসে ফিরিয়ে না নেন তাহলে আমরা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর অবস্থানে যাবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, ‘এক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই নিয়ম-এটি কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না। আমরা আইনের দ্বারস্থ হতে চাই না। এর আগেই সরকার পদক্ষেপ নিবে এমন প্রত্যাশা রাখি। আমরা ক্লাসরুমে যেতে উন্মুখ। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা যোগাযোগ করছি।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৩ মার্চ সরকার সর্বজনীন পেনশনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, আগামী ১ জুলাই থেকে যেসকল শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরিতে যোগ দিবেন তাদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য বিদ্যমান অবসর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রযোজ্য হবে না।
এর প্রেক্ষিতে গত ২০ মে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করে আসছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে চবি শিক্ষক সমিতি। তবে এসময় পরীক্ষাসমূহ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া দাবি আদায় না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবে চবি শিক্ষকদের এ সংগঠনটি। এসময় ক্লাস পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজসহ সবকিছুই কর্মবিরতির আওতাভুক্ত থাকবে।