প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুরুতে, প্রথম যেদিন বর্ষার বৃষ্টি নামে; সেদিনই প্রজাপতিদের বর্ষা উৎসব” নামের একটি বিশাল বড়ো ধরনের উৎসব উৎযাপন করা হয়। এলাকা ভেদে একই দিনে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হলেও আয়োজনের মধ্যে কিছুটা ব্যাতিক্রম থাকে কোন-কোন ক্ষেত্রে। পাহাড়ী অঞ্চলে একধরনের, আবার নদী বা হাওর এলাকায় আর এক ধরনের। পার্থক্য থাকে বনাঞ্চলে, শহর বা গ্রাম এলাকায়ও। তবে আনুষ্ঠান আয়োজনে ভিন্নতা থাকলেও, একটি বিষয়ের কোন ভিন্নতা থাকে না, আর তা হলো – বিয়ের উপযুক্ত কোন পুরুষ ও মেয়ে প্রজাপতিরদের জন্য বিয়ের আয়োজনে।
প্রজাপতিদের বিয়ে, বৎসরের একটি বিশেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয়, এক অনুষ্ঠানে একসাথে একাধিক প্রজাপতির বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি বর্ষাকালে অনুষ্ঠিত হয় বলেই, এটি বর্ষা উৎসব নামে পরিচিত হলেও, এই অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছিল মূলত: বিয়ে-সাদীকে কেন্দ্র করেই। এই বিশেষ দিনটির আগে বা পরে প্রজাপতিদের কোনভাবে বিয়ের সুযোগ নেই, অপেক্ষা করতে হয় দিনের পর দিন, এই বিশেষ দিনটির জন্য।
অঞ্চল ভেদে উৎসব উৎযাপনের একটি শক্তিশালী পরিচালনা কমিটি থাকে, এবং একটি ব্যতিক্রম ধরনের প্রজাপতি এই কমিটির প্রধান হয়ে থাকেন। কমিটি প্রধানের বিশেষ গুণ হলো, সবার থেকে সবচেয়ে বেশি বয়সের চির কুমার প্রজাপতি। কমিটি প্রধান হওয়ার জন্য কিছু প্রজাপতি বিয়ে না করে বেশি বয়সের অধিকারী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু দূর্ঘটনা জনিত কারণে বেশিরভাগ মৃত্যুবরণ করার কারণে, কমিটি প্রধানের পদ অর্জনে সফল হতে পারে না অধিকাংশ পদ-প্রত্যাশী। এই কারণে কমিটি প্রধান হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে।
বর্ষা উৎসব উৎযাপন কমিটির প্রধানকে অন্যান্য প্রজাপতিগুলো ‘রাজার-রাজা’ বলে সম্মান সূচক সম্বোধন করে থাকে। বর্ষা উৎসবের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজে প্রজাপতিগুলো নাচ গান করে থাকে, বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলে। বৃষ্টি থামার পর ‘রাজার-রাজা’ সকল প্রজাপতিদের একটি সবুজ শস্যক্ষেতে সারিবদ্ধ হয়ে বসতে বলে, অত:পর সকলের পৃষ্ঠদেশ পরীক্ষা করে দেখেন, আাষাঢ় মাসের প্রথম বৃষ্টিতে ভেজার কারণে যে প্রজাপতিগুলোর পৃষ্ঠদেশে বিভিন্ন রং এর, একধরনের দেখতে খুব সুন্দর আলপনা তৈরি হয়েছে, কেবলই তাদেরকেই তিনি বিবাহিত বলে ঘোষণা করেন এবং নারী ও পুরুষ প্রজাপতিগুলোর জোড়া মিলিয়ে দেন দক্ষতার সাথে, স্বামী ও স্ত্রী হিসাবে। প্রজাপতিদের বিয়ে আসলে এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, এভাবেই সম্পুর্ন হয়ে থাকে।
‘রাজার-রাজা’ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তার, কোনধরনের অলসতা থাকে না। যুগ-যুগ ধরে বর্ষা উৎসবের মতো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রজাপতিদের বিয়ে হয়ে থাকে বা হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে, হয়তো আগামীতেও হতে থাকবে এমনি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।