প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে হবে

10

মানুষ প্রকৃতির অংশ। গাছপালা, পশুপাখি, নদী-সমুদ্র, পাহাড়-পর্বত পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশে যা কিছু আছে সবই মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষ কাটছে গাছ, উজাড় করছে বনাঞ্চল, ভরাট করছে নদী, কাটছে পাহাড়। বিপন্ন করছে পশুপাখির জীবন। যে কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দেশ ও বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। ফলে বিশ্বে বেড়েছে উঞ্চতা, গলছে বরফ। নাব্যতা বাড়ছে নদী সমুদ্রের। মাছ বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি, বজ্রপাত, অতি বৃষ্টি , অনাবৃষ্টি, মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়ছে। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতে আবহাওয়ায় ফের ভর করেছে তাপপ্রবাহ। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ আরও দুইদিন অব্যাহত থাকার সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাপপ্রবাহের দাপটের সাথে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য গরমের অনুভ‚তি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে নিচ্ছে। প্রচন্ড গরমে সর্বত্র চরম অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রখর রৌদ্রতাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে তোলা এমন পরিস্থিতিতে অবশ্য ক্ষণিকের স্বস্তির সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তাপপ্রবাহের মধ্যে আজ শনিবার থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের আভাস দেয়া হয়েছে। তবে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে আগামী সোমবার থেকে। ওই সময়ের বৃষ্টিপাত কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে শনিবার সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যে চার বিভাগে তাপপ্রবাহ চলমান, সেই অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টির জন্য আরও দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে। সোমবার থেকে এসব অঞ্চলসহ সারা দেশেই বৃষ্টি হবে। এর মধ্যে কোনও কোনও অঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির নিচে নেমে এসেছিল। সেই অনুযায়ী গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা বেড়েছে। ২০ মের কাছাকাছি সময়ে সারাদেশে ভালো বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, সর্বোচ্চ তিন-চার দিন স্থায়ী হতে পারে সেই বৃষ্টি। এর আগে যা হবে তা ততটা প্রভাব ফেলবে না। বৃষ্টির পর আবার তাপপ্রবাহ আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গত কয়েক দিনে দেশের চার বিভাগের (ঢাকা, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী) তাপমাত্রা দুই থেকে পাঁচ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগে এপ্রিলের তাপপ্রবাহের সময় এসব বিভাগের কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছিল। তবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমে আসে। কোনও কোনও অঞ্চলে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির নিচে নেমে যায়। কিন্তু চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবারও তাপমাত্রার পারদ চড়ে গেছে। যদিও বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে তীব্র আকার ধারণ করেনি। এর আগে স্মরণকালের দীর্ঘ দাবদাহের কারণে চলতি মে মাসের শুরুতে ও এপ্রিলের শেষে কয়েক দফায় সতর্কবার্তা দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। মাঝে বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কমলে স্বস্তি ফেরে জনজীবনে। তবে সাময়িক সেই সময় পেরিয়ে আবার শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য দেয় আবহাওয়া অফিস, যা অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়। এবার ৩১ মার্চ থেকে দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। যা ৬ মে পর্যন্ত টানা ৩৭ দিন ছিল। এরপর গত সপ্তাহে ঝড়-বৃষ্টির প্রবণতায় কিছুটা স্বস্তি ফেরে। নতুন করে তাপপ্রবাহ শুরু হয় গত সোমবার থেকে। সেদিন সাত জেলায় দাবদাহ ছিল। পরে তা ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অধিদপ্তর থেকে প্রচারিত মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু অথবা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। টানা দাবদাহের মধ্যে ৩০ এপ্রিল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। সেটাই এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক বা দুটি লঘুচাপের পূর্বাভাসও আছে, যার মধ্যে একটি মাসের শেষার্ধ্বে নি¤œচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ একদিনের ব্যবধানে অবশ্য কিছুটা কমেছে। বিভাগের আওতাধীন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি পাশাপাশি উপক‚লীয় অঞ্চল সীতাকুন্ড, চাঁদপুর ও ফেনীর উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রাঙামাটি ও চাঁদপুরে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সীতাকুন্ডে ৩৬ দশমিক পাঁচ ও ফেনীতে ৩৬ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য জেলাসমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের অঞ্চলে ৩৪ দশমিক নয়, স›দ্বীপে ৩৫ দশমিক আট, কুমিল্লায় ৩৫ দশমিক ছয়, নোয়াখালীর মাইজদীতে ৩৫ দশমিক আট, হাতিয়ায় ৩৫, কক্সবাজারে ৩৫ দশমিক পাঁচ, কুতুবদিয়ায় ৩৪, টেকনাফে ৩৫ দশমিক দুই এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ৩৫ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। অতিবৃষ্টি, হিমবাহ, মাত্রাতিরিক্ত তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রকৃতি ধ্বংসের সকল প্রবণতা হতে বিরত থাকতে হবে। পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা মানবজাতির অন্যতম প্রধান কর্তব্য।