পোশাকশিল্পে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসররা

3

পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের শিল্পখাতকে ধ্বংস করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের প্রধান লক্ষ্য দুটি পোশাকশিল্প ধ্বংস করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া এবং পার্শ্ববর্তী দেশের পরিকল্পনা সফল করা। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে পোশাকশিল্পে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এ এ এম ফয়েজ হোসেন। লিখিত বক্তব্য পেশ করেন ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। খবর বাংলানিউজের
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্বৈরাচার সরকারের পতনের আজ এক মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। আপনারা অবগত আছেন, বিগত একমাসে পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসররা ক্ষমতা ফিরে পেতে কীভাবে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু, সনাতন ধর্মালম্বীদের উসকে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা, আনসার বিদ্রোহসহ বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে প্রতিবিপ্লবে রূপ দেওয়ার নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
স্বৈরাচারের দোসররা তাদের কুচক্রী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এখন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান সেক্টর পোশাক শিল্পের ওপর ভর করেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, পোশাকশিল্প এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। জিডিপিতে পোশাকশিল্পের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। পোশাকশিল্পে প্রায় ৪৪ লাখ শ্রমিক সরাসরি সম্পৃক্ত, যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী শ্রমিক এবং পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অন্যান্য বাণিজ্য মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করছে এই খাতের ওপর। এক সময় পোশাকশিল্প ছিল ১ মিলিয়ন ডলারের শিল্প। যা আজকে দাঁড়িয়েছে ৪৬ মিলিয়নে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চীনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। অর্থনীতিবান্ধব এ শিল্প আরেকটু পরিকল্পিতভাবে গোছানো সম্ভব হলে খুব তাড়াতাড়ি আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে শীর্ষস্থান অধিকার করবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত জুলুমের শিকার হচ্ছেন। বছরের পর বছর তাদের বেতন-ভাতা নামকাওয়াস্তে বাড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলতে গেলে বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় তাদের ওপর পুলিশ ও দলীয় ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে সব আন্দোলনকে স্তিমিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিগত দেড় দশকে পোশাক শ্রমিকের মজুরি যৎসামান্য বেড়েছে। করোনা মহামারি চলাকালে গার্মেন্টস মালিকরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা পেলেও তার ভাগ শ্রমিকরা পাননি। বরং সে সময়ে চাকরি হারিয়ে হাজারো পোশাকশ্রমিক বেকার হয়েছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ন্যূনতম মজুরির আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গাজীপুরে নারীসহ চারজন শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে। একই আন্দোলনে অসংখ্য শ্রমিক মারাত্মক আহত হয়ে কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। মিথ্যা মামলার আসামি করা হয়েছে শত শত শ্রমিককে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী সরকারের তল্পিবাহক ও আর্শীবাদপুষ্ট ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা শ্রমিকরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এতে বলা হয়, গত এক সপ্তাহ ধরে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা চলছে। একের পর এক পোশাক কারখানা মালিকরা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক কারখানা বিশৃঙ্খলার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশিরভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীদের হামলা-ভাঙচুরের কারণে বন্ধ করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর বিজিএমইএর বিগত নির্বাচনের ভোট ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড কিছু নেতা ও তাদের দলীয় স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে পোশাকশিল্পে অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়। আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে থেকে শ্রমিক নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে পোশাকশিল্পে অরাজকতা সৃষ্টি করে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা লিপ্ত আছে। এর অংশ হিসাবে তারা কারখানাগুলোতে চাকরির দাবিতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষকে পাঠিয়ে ‘চাকরি চাই’ ¯েøাগান দিয়ে কারখানাগুলোতে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা মনে করি আমাদের দেশের প্রকৃত পোশাকশ্রমিকরা কোনোভাবেই এ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। শ্রমিকরা কখনো তাদের কারখানা বন্ধ হোক তা চায় না।