পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সুবাস ছড়াচ্ছে পাকা আনারস

6

মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সুবাস ছড়াচ্ছে পাকা আনারসের মিষ্টি গন্ধ। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি, সদরসহ চিম্বুক এলাকার প্রতিটি পাহাড়ের ঢালুতে এখন শোভা পাচ্ছে পাকা আনারস। আকারে বড়, রসালো ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে বান্দরবানে উৎপাদিত আনারস। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি জুমিয়ারাও।
রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, সদরের চিম্বুক লাইমিপাড়া, ফারুক পাড়া শৈল প্রপাতসহ সবগুলো পাহাড়ে এখন একই চিত্র। প্রতিটি পাহাড় পাকা আনারসে ছেয়ে গেছে। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা এবং মে-জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয় প্রতিটি আনারস। আর কাঁধে থুরুং নিয়ে বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী এসব আনারস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাহাড়ের জুমিয়ারা। সেই আনারস বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় হাট বাজার ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়াও পাইকারী বিক্রেতারা বাগানে গিয়ে আনারস কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।
পাহাড়ে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ আনারস আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও ভালো। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া জায়ান্ট কিউ আনারস চাষের উপযোগী হওয়ায় স্বল্প পরিশ্রম ও কম খরচে অধিক লাভবান হন চাষীরা।
লাইমি পাড়া এলাকার আনারস চাষী পাকসিয়াম বম বলেন, এ বছর আনারসের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। আমাদের পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস অন্যান্য জেলার আনারসের চেয়ে অনেক ভালো। খুবই মিষ্টি, রসালো ও আকারে বড় হওয়ায় পাইকাররা বাগানে এসে আনারস কিনে নিয়ে যায়। আমাদের বাজারে গিয়ে বিক্রি করতে হয় না। পর্যটকরাও আসে, অনেকে খায় আবার অনেকে বাড়ির জন্য নিয়ে যায়। তবে পাইকারী বিক্রির চেয়ে খুচরা বিক্রি করতে পারলে আমাদের অনেক লাভ হয়।
ফারুক পাড়া এলাকার আরেক কৃষক সানতোয়াল বম বলেন, এ বছর ছয় একর জায়গায় আনারসের বাগান করেছি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলেও ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় দামও মোটামুটি ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য চাষের মতো আনারস চাষে পরিচর্যা তেমন একটা না করলেও চলে। অনেক সময় একই জমিতে দুইবার ফলনও পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, এ অঞ্চলে উৎপাদিত জায়ান্ট কিউ এবং হানি কুইন আনারস আকারে বড়, রসালো এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। যার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ অঞ্চলে উৎপাদিত আনারসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। তিনি আরও, ফলন বাড়াতে আনারস চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু এখানে আনারসসহ মৌসুমি ফল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পচনশীল এসব পণ্য অনেক সময় কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। আনারস সংরক্ষণের মাধ্যমে আনারস থেকে যাতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় সেক্ষেত্রে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, বিগত বছর জেলায় ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন আনারস। চলতি বছর ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন।