পাহাড়ের অবৈধ বসতি উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

1

চট্টগ্রাম ও পার্বত্যজেলার সরকারি পাহাড়ি জায়গায় বহু অবৈধ মানববসতি রয়েছে। বিচিত্র প্রকৃতির মানুষ সেখানে বসবাস করে । বাস্তুহারা , নদীসিকস্তি , বাড়ি-ভিটাহীন দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অপরাধ জগতের সাথে জড়িত বহু মানুষও পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপন করে বাস করে। ভালোমন্দ মিলিয়ে অনেকের বসবাস পাহাড়ে আছে সত্য কিন্তু বর্ষায় পাহাড়ে বসবাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এবছর বর্ষায় প্রচুর ভারিবর্ষণ হতে দেখা যাচ্ছে। বর্ষাকালে পাহাড়ে ভূমিধস একটি স্বাভাবিক বিষয়। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেও বারবার ব্যর্থ হতে দেখা গেছে। বিগত ১০সেপ্টেম্বর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় চট্টগ্রামের ভিাগীয় কমিশনার মহোদয় পাহাড়ের অবৈধ বসতি উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ব্যক্ত করেন।
অন্যান্য সময়ে রাজেনৈতিক সরকারের অধিনে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা জটিলতার সম্মুখিন হতে দেখা গেছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে প্রশাসন চাপমুক্তভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার পরিবেশ আইনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন খাস ও ব্যক্তিগত পাহাড় কাটা কিংবা কোনো ধরনের ক্ষতি করা যাবে না। অবৈধ বসতি উচ্ছেদসহ স্থায়ীভাবে সরকারি সম্পত্তি রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ জন্য জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মধ্যে আন্তঃদপ্তর আলোচনা করে উচ্ছেদ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের নির্দেশনাও দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভায় এসব নির্দেশনা দেন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম তিনি বলেন, সরকারি, ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংস্থার পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। কোন দুর্ঘটনা ঘটলে পাহাড় মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড় থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার পর যাতে বেদখল না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিছিন্নকরণ কার্যক্রমের অগ্রগতি কতটুকু তা ১৫ দিন পর পর প্রতিবেদন আকারে জানাতে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশনা দেন বিভাগীয় কমিশনার।
চট্টগ্রাম পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাব্বির ইকবাল, সিটি করপোরেশনের সিইও শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) তানভীর আল নাসীফ, সিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার নিস্কৃতি চাকমা, বিজিবি’র কর্মকর্তা মেজর মো. আমিরুল ইসলাম, রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবদূত মজুমদার, ডিজিএফআই’র উপপরিচালক মোহাম্মদ ইফতেখার উদ্দিন, র‌্যাবের এএসপি মো. নাসির উদ্দিন, জেলার সহকারী পুলিশ সুপার মনীষ দাশ, রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর পরিচালক সোনিয়া সুলতানা, অঞ্চল পরিচালক মো. হাছান হাছিবুর রহমান, বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম, আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস.এম কায়চার, সিডিএ’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী, নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদ বিন আনোয়ার, চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রানা চৌধুরী, পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী, এএফএম নুর উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত কান্তি দে, নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছানা উল্লাহ, ওয়াসার সহকারী সচিব মোহাম্মদ বাবুল আলম, রেড ক্রিসেন্টের দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ সিটি করপোরেশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সিডিএ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ, গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা- প্রতিনিধিগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা মতে সরকারি খাস ও ব্যক্তিগত পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের অবিলম্বে উচ্ছেদসহ তাদের পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করা হবে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করতে যারা সহযোগিতা ও উৎসাহিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। জনগণ পাহাড় কাটা রোধ, পরিবেশ আইন রক্ষা, অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করে মৃত্যু ঝুঁকি রোধ এবং পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করে।