পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অচল

9

পূর্বদেশ ডেস্ক

সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমের’ প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে কর্মসূচি। গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয় দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, রংপুরসহ দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। কবে ক্লাস শুরু হবে সেটিও জানেন না শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১ জুলাই (গতকাল) থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা আসে।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া জানান, আমরা সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তারা সবাই কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এই আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য করছি।
দেশে এত দুর্নীতির কথা আমরা শুনি। সেসব কী শিক্ষকরা করেছে? তাহলে কেন তাদের সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক।
তবে, এই দাবি পূরণে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কোনো আলোচনা ছাড়া এই পেনশন স্কিম চাপিয়ে দেয়ার কারণেই অচল হয়ে আছে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। শিক্ষকদের সাথে এই আন্দোলনে আছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীরাও।
জানতে চাইলে পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সরকারের পলিসি বাস্তবায়ন করি।সে অনুযায়ী আমরা প্রত্যয় স্কিমকে রেডি করে রেখেছি। এখন যে কেউ চাইলে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে পারে। এটা বাতিল কিংবা চালুর সিদ্ধান্ত আমাদের না।
শিক্ষকদের এই দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের অংশ। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা পক্ষে-বিপক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
এদিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করেন। ফলে পুরোদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। ক্লাস না হওয়ার খবর আগে পেলেও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকার খবর আগে থেকে পাননি অনেক শিক্ষার্থী। ফলে ক্যাম্পাসে এসেও অনেক শিক্ষার্থীকে কাজ সম্পন্ন না করেই ফেরত যেতে হয়েছে।
গতকাল সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা নিজেদের কাজ থেকে বিরত থাকেন। এসময় শিক্ষকদের চবি শিক্ষক সমিতির অফিস ও কর্মকর্তাদের চবি অফিসার সমিতির অফিসে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এছাড়া সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি কর্মচারীরাও। বেলা বারোটা থেকে প্রশাসননিক ভবনের সামনে কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়ন আলাদা আলাদা ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে।
পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলাভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো বর্জন করা হয়। তিনি জানান, অন্যান্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো স্ব স্ব অনুষদ, ইনস্টিটিউটের অধীন। যেহেতু সকল শিক্ষক কর্মবিরতিতে, তাই এটি বলা যায় সেখানেও পরীক্ষা হবে না।
সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
শিক্ষকদের পাশাপাশি সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থায় পেনশনের পর এককালীন গ্রাচুয়েটিসহ যে পেনশন সুবিধা পাওয়া যেত সেটি থেকে বঞ্চিত হবেন শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, এখানে সরকারি কর্মকর্তাদের বাদ রেখে এটা স্বায়ত্তশাসিতদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে একটা বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া কেন এটি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিল সরকার।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিঠুন কুমার দাস বলেন, স্বাভাবিকভাবে যখন আমরা দেখছি নতুন পেনশন স্কিমের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে তখন আমাদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে শুরু করেই বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। দাবি আদায়ে কিছু কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। এরপরও দাবির বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়।