পানি কমায় ঘরে ফিরছে মানুষ, অনেকে নিঃস্ব

10

মিরসরাই প্রতিনিধি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখেছে মিরসরাইবাসী। বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। এখন পানি কমতে শুরু করায় মানুষ আবার ফিরতে শুরু করেছে নিজ বাড়িতে। কিন্তু বন্যায় সব হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব। এ অবস্থায় এসব অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। তারা বানভাসি মানুষের পরম বন্ধু হিসেবে বন্যার শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।
এর আগে ২১ আগস্ট টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীর পানি বেড়ে একে একে তলিয়ে যায় মিরসরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা। প্রথম দিকে পানির তীব্রতা বেশি না থাকায় ঘরবাড়িতে অবস্থান নেন অনেকে। পরে তারা পানিবন্দী হয়ে পড়েন। এ সময় যেন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন চট্টগ্রামসহ নানা এলাকার তরুণরা। তারা স্বেচ্ছায় তীব্র পানির স্রোত উপেক্ষা করে পাশে দাঁড়ান বানভাসি অসহায় মানুষের। প্রথমদিকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পানিবন্দী মানুষের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নেমে পড়েন উদ্ধার কাজে। বোট নিয়ে ছুটে যান বন্যাদুর্গতদের পাশে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অদম্য যুব সংঘের পরিচালক কামরুল হাসান জনি বলেন, আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ত্রাণ দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন। সংগঠনের রয়েছে জরুরি খাদ্য সহায়তার বন্দোবস্ত। এছাড়া পানি নেমে যাওয়ার পর স্থানীয়দের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ করতে তহবিলও গঠন করছে সংগঠনটি। বন্যা শুরুর দিন থেকে কাজ চলছে। সদস্যরা ৭-৮টি দলে বিভক্ত হয়ে গত চারদিন অন্তত এক হাজার ৫০০ মানুষকে সেবা দিয়েছে। ট্রাফিক সহায়তা, মাইকিং ও পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের পাশাপাশি শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
আরেকটি সংগঠন হিতকরীর নির্বাহী পরিচালক শহীদুল ইসলাম রয়েল বলেন, বন্যার শুরু থেকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করেরহাট, কাটাগাং ও ফেনীতে উদ্ধার তৎপরতা, হাইওয়েতে ট্রাফিকিং, আটকে পড়া চালক, হেলপার, যাত্রী, বন্যার্তদের মাছে খাবার পানি বিতরণ, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ বিতরণ, পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ও ত্রাণ প্রস্তুতে দিনরাত কাজ করছেন আমাদের সদস্যরা।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মিরসরাই সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, দুর্বার প্রগতি সংগঠন, হিতকরি, শান্তিনীড়, আমবাড়িয়া যুব সংঘ, শতাব্দী সংঘ, চট্টগ্রাম যুব রেড ক্রিসেন্ট অ্যালমনাই, রোটারি ক্লাব অব চিটাগং, লিও ক্লাব অব চিটাগং, ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব মিরসরাই, অপকা, নয়া দালান, কমফোর্ট হাসপাতাল, রোভার স্কাউট বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি চট্টগ্রাম, উত্তরণ, পশ্চিম জোয়ার ক্রীড়া সংস্থা, উদয়ন ক্লাব, বিজলী ক্লাব, দুরন্ত সংঘ, প্রজন্ম মিরসরাই, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগং মিরসরাই, অদম্য যুব সংঘ, সৃজন যুব সংঘ, ইছামতী যুব কল্যাণ সংঘ, জামায়াতে ইসলাম, ছাত্র শিবির, মিরসরাই উপজেলা বিএনপি, উপজেলা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলসহ নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বানভাসি মানুষের সহায়তায় কাজ করছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সাহায্য করছে তাদের। সেনাবাহিনীও উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে। এছাড়া প্রবাসীরাও বন্যার শুরু থেকে বানভাসি মানুষের পাশে রয়েছেন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, তরুণরা দেশের সব প্রেক্ষাপটে মানুষের পরম বন্ধু হয়ে কাজ করেন। এবারের বন্যায় তাদের উদ্যোগ আমাকে রীতিমতো অবাক করেছে। অক্লান্ত শ্রম ও সাহসের সঙ্গে তারা অসংখ্য বানভাসি মানুষকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি তারা খাবার ও নানা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন।

ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী:
মিরসরাইয়ে ভয়াবহ বন্যায় দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সম্প্রতি ফেনী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ও ভারী বৃষ্টির কারণে টানা ৭ দিন মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় গতকাল বুধবার দুপুরে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ডিভিশনের জিওসি মাইনুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল ফেনী নদীর দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে (উপক‚লীয় এলাকা) বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। তারা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোট নিয়ে এসব এলাকায় গিয়ে ত্রাণ পৌঁছায়। এছাড়া মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বিএসআরএম কারাখানা এলাকায় স্থাপন করা সেনাবাহিনী পরিচালিত চিকিৎসা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন জিওসি মাইনুর রহমান।
ফেনী নদীর উত্তর পাড়ের ফরহাদ নগর ইউনিয়নের জীবনপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, সেনাবাহিনী নিয়মিত তাদের এলাকায় পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে কাজ করেছে, পাশাপাশি নিয়মিত ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। তারা এখন পুনর্বাসনে সরকারের সহযোগিতা পেতে চান।