পানির নিচে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, দীর্ঘ যানজট

2

মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের সোনাপাহাড় এলাকায় হাঁটু পানি জমে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েন মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। ভারী বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে মহাসড়কের ওই অংশ ডুবে যায়। এছাড়াও মিরসরাইয়ে টানা দুই দিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় তিন হাজারের বেশি পরিবার। ফলে রাত-দিন দুর্বিসহ জীবন পার করছেন অনেকে। কাজ না থাকায় কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। পাহাড়ি ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়ক। ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের। অনেক মৎস্য প্রকল্প থেকে পানিতে মাছ ভেসে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকার চট্টগ্রামমুখী লেইনে আরশিনগর ফিউচার পার্ক থেকে জোরারগঞ্জ রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় চলাচলরত যানবাহনগুলো চলছে ধীর গতিতে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। যানজট সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সড়কে চলাচলরত যাত্রীরা।
সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর সোনাপাহাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আরশিনগর ফিউচার পার্ক থেকে জোরারগঞ্জ রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। প্রায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে সড়কে। সড়কের পাশে স্থানীয় শিশু ও যুবকরা খেলা করছে। সড়কে পানি জমায় চিনকি আস্তানা রেল স্টেশন থেকে মামা ফকিরের আস্তানা পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাফেজ আলা উদ্দিন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। বুধ ও বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি যেতে না পারায় মহাসড়কে পানি উঠে গেছে।
চট্টগ্রামমুখী উত্তরা বাস সার্ভিসের চালক নজরুল ইসলাম বলেন, বারইয়ারহাট থেকে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। একটু এগিয়ে চিনকি আস্তানা এলাকায় গিয়ে দেখি যানজট। প্রায় ৪৫ মিনিট যানজটে থাকার পর সোনাপাহাড় এলাকায় ডুবে থাকা মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে মিরসরাই এসে পৌঁছি। ২০ মিনিটের পথ আসতে সময় লেগেছে প্রায় ১ ঘণ্টা।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল সরকার বলেন, সোনাপাহাড় এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি উঠায় যানবাহনগুলো একটু ধীর গতিতে চলতে গিয়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পানি নেমে গেছে, এখন যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মিরসরাইয়ে পাহাড়িঢলে পানিবন্দী হাজারো পরিবার
এদিকে দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক। পানিবন্দী হয়ে আছে ফেনাফুনী, ওসমানপুরের মরগাং, চিনকীআস্তান, সরকারতালুক, মাইজগাঁও, খাজুরিয়া, ভ‚ঁইয়া গ্রাম ও খিলমুরালী গ্রামের তিন হাজারের বেশি পরিবার।
খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসান জানান, ‘আমরা প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষা মৌসুমে পানির মধ্যে বসবাস করছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢলে পুরো এলাকা ডুবে যায়। মূলত ফেনাপুনি খালটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এমনটা হচ্ছে। এক মাস পূর্বে এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিলেও গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আমরা আবারো ডুবে রয়েছি’।
খৈয়াছড়া ইউনিয়নের সৈদালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মহসিন জানান, ‘খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে সৈদালী ডুবে থাকে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। অনেকের রান্নাঘরে পানি উঠার কারণে চুলায় আগুন জ্বলেনি’।
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা জাকের হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢলে আমাদের হাবিব উল্লাহ ভ‚ঁইয়া সড়ক ছড়ায় মিলে গিয়ে বিলীন হয়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে হামিদ আলী ভ‚ঁইয়া জামে মসজিদ থেকে রেল লাইন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মিটার সড়কে স্বাধীনতার পর সরকারি কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি।
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার প্রায় এক একর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হবে।
জানা যায়, মায়ানী-মঘাদিয়া খাল আবুতোরাব বাজার ঘেঁষে পশ্চিম দিকে ঘুরেছে। বাজারটির পূর্ব অংশ থেকে শুরু করে মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম অংশ পর্যন্ত দখল-দূষণে ছোট হয়ে আসছে এই খাল। খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। কেউ কেউ খালের ওপর খুঁটি দিয়ে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ করছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি কিছু প্রভাবশালীও দখল প্রতিযোগিতায় মেতেছেন সমানতালে। এছাড়া পুরো একটি বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলার অন্যতম স্থান হিসেবে তারা এই খালটিকে বেছে নিয়েছেন। এতে বৃষ্টি হলে পানি আটকে পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র বড় খাল মায়ানী-মঘাদিয়া খাল। কিন্তু এই খাল এখন আর খাল নেই, দখল হতে হতে এখন পানি নিষ্কাশনের ছোট ছড়ায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া ২০০৮ সালের পর এই খাল খননে বার বার উদ্যোগ নেওয়া হলেও গত ১৫ বছরেও তা খনন করা হয়নি। যার ফলে আমরা এখন পানিতে ভাসছি।
খৈয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, আমার ইউনিয়নের ফেনাপুনি ও সৈদালী গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত মায়ানী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের লোকজন খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার ইউনিয়নের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।