পানির নিচে গুমাইবিল, আমন চারা পচে যাওয়ার শঙ্কা

3

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ইছামতী সংলগ্ন ৭টি ইউনিয়ন টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে। ইছামতী নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে সকাল থেকে প্রবল বেগে এসব ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে পানি ডুকে পড়ে। পানিতে আটকা পড়েছে নারী শিশুসহ একাধিক গ্রামের মানুষ। এমত অবস্থায় কাপ্তাই বাধের পানি ছাড়লে রাঙ্গুনিয়া বন্যায় মহাকার ধারণ করবে। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ও বৃষ্টির পানি জমে ব্যাপক ক্ষতি হযেছে। এখানেরও রোপর আমনের চারা ৪দিন ধরে পানির নিচে। রাঙ্গুনিয়ার ইসলাম পুর , রাজা নগর . চন্দ্রঘোনা , পৌরসভা নোয়াগাও এলাকা পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দু পাড়ে শত শত বাসিন্দা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। অনেকের ঘর কর্ণফুলী নদীর তীব্র পানির স্রোতে ভেঙ্গে নিয়ে যায়।
বন্যায় পানিতে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে রণি নামের এক কিশোর। দক্ষিণ রাজা নগর ফুলবাগিচা বিলে এঘটনা ঘটে। উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাথে এলাকাবাসীরা খোঁজ চালাচ্ছেন। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। নিখোঁজ কিশোরের প্রতিবেশী মো. ইউসুফ আলী জানান, এদিন সকাল থেকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গাবতলের ভেতরে বাইস্সা ডেবা দিয়ে হালিম শাহ মাজারের আগে সড়কের উপর দুই ফিটের উপর পানি উঠে যায়। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয় আশেপাশের গ্রাম। সেখানে চার-পাঁচজন কিশোর কলাগাছের ভেলা নিয়ে ঘুরতে যায়। এরমধ্যে রনিও ছিলো। একপর্যায়ে ঢলের মধ্যে সবাই নিরাপদে উঠে যেতে পারলেও ভেসে যায় রনি।
দেশের তিন দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী রাঙ্গুৃনিয়া গুমাই বিল ৫দিনের টানা বর্ষণে গুমাই বিলের আড়াই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমনের চারা ৩য় বার ৭ ফুট পানিতে ডুবে গেছে। গুমাই বিল ছাড়াও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া বিল, রইস্যা বিল, তইলাভাঙা বিল ও তালুকদার বিলসহ কমপক্ষে ১৫টি বিল ডুবে গেছে। গুমাই বিলে চাষাবাদ করা সাড়ে ৩ হাজার কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ২০১৫ সালেও এবারের মতো অতি বৃষ্টিপাতের কারণে গুমাই বিলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল সে সময় বিলে রোপা আমনের চারা প্রায় ১০ দিন পানির নিচে থাকায় পচে গেলে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারও সেই আশঙ্কায় গুমাই বিলের তিন হাজার কৃষকের চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। কাপ্তাই বাধের পানি ছাড়লে রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিল বন্যায় প্লাবিত হয়ে আমন চাষাবাদ পচে গলে নষ্ট হয়ে যাবে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, হোছনাবাদ, লালানগর, দক্ষিণ রাজানগর, রাজানগর, ইসলামপুর ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উত্তর রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ এর দুটি সড়ক মরিয়মনগর-গাবতল ও ঘাটচেক-রানীরহাট সড়ক দুটি পানিতে ডুবে গেছে। এ দুটি সড়কসহ একাধিক অংশে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যোগাযোগে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীসহ সাধারণ জনগণের। পারুয়া ইউনিয়নে পানি বন্দি হযেছে শত শত পরিবার। সড়কেও পানি উঠে য়াওয়ায় জন ও যান চলাচল বন্ধ রযেছে।
ইছামতি নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি স্রোত বেড়ে গেছে। পানির স্রোতে ভয়াবহ আকারে রুপ নিয়েছে ইছামতি নদীর পানির গতি। আশে পাশের এলাকা ঘর বাড়ি চরম উৎকন্টা দেখা দিয়েছে।
বিকেল পর্যন্ত মোগলেরহাট এলাকায় পানি বৃদ্ধির ফলে অনেকে আটকা পড়েছেন। এসময় আটকা পড়া অনেক শিশু ও মহিলাদের আহাজারি করতে দেখা যায়। স্থানীয়রা এখানে দড়ি বেঁধে কয়েকজনকে উদ্ধার করলেও আটকা আছে একাধিক মানুষ। স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া এলাকায় বেশ কিছু গ্রামে মানুষ পানিতে আটকে পড়েছে। তাদের অধিকাংশ আবার অনেকের পাঁকা বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
মোগলের হাটের মাছ চাষি খুরশেদ আলম জানান, জীবনে এমন পানি দেখি নাই। এত পানি কোথেকে আসছে বুঝতে পারছি না। ইতিমধ্যে আমাদের এলাকার অনেকের ঘরে প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ আর মোবাইল ইন্টারনেট নাই বললেই চলে। আমার মাছের পুকুর ডুবে গেছে। মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকার মাছ পানির স্রোতে অন্যত্র চলে গেছে।
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান মো শফি জানান, তার ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বসবাসকারী পরিবার এর ঘর বাড়িসহ বিস্তীর্ণ অংশ নদী গর্ভে বিলীন হযে যায়। ইউনিয়নের গুনগুনিয়া বেতাগী, ঘর বাড়ি, আবুল বশর বাড়ি, মাস্টার গাড়া ফিনিঙ্গা খালের মুথ এলাকার ভাঙ্গনের মুখে শত শত বাড়ি অবম্থান করছে। কমপক্ষে গত ৫ দিনে টানা বৃষিতে নদীর পাড়ে বসবাসকারী ১০টি ঘর রাক্ষুসী কর্ণফুলী নদীর পেটে চলে যায়। প্রতি মুহূর্তে পানির স্রোতে ঘর বাড়ি হারাচ্ছেন এলাকার অসহায় পরিবার।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বৃহস্পতিবার বন্যা কবলিত এলাকার পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে চলে আসার আহবান জানান।